মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন
মো: ফারুক,পেকুয়া
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম সাহাব উদ্দিন ফরায়েজী হত্যা মামলার মূল আসামীরা এখনো ধরাচোয়ার বাইরে রয়েছে। যার কারণে নির্মম হত্যাকান্ডের স্বীকার ওই নেতার পরিবার ও তার নিকট আত্বীয়রা চরম আতংকের মধ্যে রয়েছে। তবে পুলিশ প্রশাসন তাদেরকে ধরতে সম্ভাব্য সবস্থানে অভিযান চালালেও পুলিশের চোখকে ফাকি দিয়ে যে কোন মূহর্তে বিদেশ পলায়নের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে মূল আসামী কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি হত্যকান্ডের পর থেকে রহস্যজনক কারণে ওই প্রভাবশালী আসামীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলেও স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, নির্মম ওই হত্যাকান্ডের মূল আসামী যুবদল নেতা শাহাদাৎ হোসেন মেম্বার, যুবলীগ নেতা আবদুল জলিল মেম্বার তার ভাই আজিজুর রহমান, উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জেএড এম মোসলেম উদ্দিন, ফজল করিমের পুত্র আবু উমর, শের আলীর পুত্র রেজাউল করিম (ভাইজান), বদিউল আলমের ছেলে হেলাল উদ্দিন ও দেলোয়ার হোসেন (দেলু ডাকাত)সহ আরো কয়েকজন টেকনাফ হয়ে সমুদ্র পথে মালেশিয়া অথবা ভারত হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই পাড়ি দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় সরাসরি দুবাই অথবা মালেশিয়া যেতে না পারলেও ওই আসামীরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে কোন অঙ্গ রাজ্যে গিয়ে ওখান থেকেই অন্যদেশে পাড়ি দিতে পারে।
মামলার রুজু হওয়ার আগে এবং পরে পুলিশ কয়েক আসামীকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করলেও ওই আসামীরা গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এদিকে পুলিশ তাদেরকে আটক করতে বাড়ীতে হানা দিলেও তাদের নাগাল পায়নি। পেকুয়া থানা পুলিশ তাদেরকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। তারা কোথায় আত্মগোপনে রয়েছে সেটারও খোঁজ খবর নিচ্ছে পুলিশ। আর ফরায়েজী হত্যাকান্ডের পর থেকে ওই আসামীর গুলোর ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারও বন্ধ রয়েছে।
এদিকে বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ বিদেশ পালিয়ে যেতে না পারলে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে জামিনের চেষ্টা করতে পারে স্বীকৃত ওই অপরাধীরা। এর আগেও তারা বড় বড় অপরাধ সংগঠিত করে কৌশলে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে আবারো অপরাধ সংগঠিত করে। যার কারণে পেকুয়ার আইনশৃংখলার চরম অবনতি হয়।
গতকাল ১৮অক্টোবর সরেজমিনে হত্যা মামলার আসামীদের এলাকায় গিয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ.ক.ম সাহাব উদ্দিন ফরায়েজী হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত আসামীরা ঘটনার পর থেকে এলাকা ছেড়ে গা ডাকা দেওয়ায় সন্দেহের তীর তাদের দিকে আরো বেশি প্রকট হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতা ফরায়েজী হত্যায় তারা মূল নেপথ্যে হিসেবে ভূমিকা পালন করেছিল তারাই। এ আসামীর মধ্যে বেশিরভাগ বিএনপির রাজনীতির সাথে সারাসরি জড়িত। আবার তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে ডজন ডজন মামলা। আর কয়েকজন যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও তাদেরকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
নিহতের ফরায়েজীর পুত্র ও মামলার বাদী মেহেদী হাসান অভিযোগ করেছেন, এ হত্যাকান্ডের পিছনে শাহাদাৎ হোসেন, আবদুল জলিল, মোসলেম উদ্দিনসহ এজহারভুক্ত আসামী সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে।
তিনি আরো জানান, তার পিতাকে যারা হত্যা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে তিনি হত্যা মামলা করেছেন। ইতিমধ্যে পুলিশ কয়েক আসামীকে আটক করে রিমান্ডেও নিয়েছে। তবে মূল আসামীরা যে কোন মূহর্তে বিদেশে পালিয়ে যেতে পারে অথবা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আবারো হত্যাকান্ডের মত ঘটনা ঘটাইতে পারে বলে আশংকা করছেন।
পেকুয়া থানার ওসি মো. আবদুর রকিব জানান, পুলিশ ইতিমধ্যেই এ মামলার এজাহার নামীয় ৫ আসামীকে গ্রেফতার করেছে। মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (৬ অক্টোবর) সকালে সাড়ে ৮ টার দিকে পেকুয়া উপজেলার দূর্গম টইটং ইউনিয়নের বটতলী মালগারা ছড়া থেকে ভাসমান অবস্থায় পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আর আওয়ামী লীগ সভাপতি নিহতের ৩দিন পর গত শনিবার অবশেষে থানায় ১৭জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের ছেলে, পেকুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক হাফেজ মেহেদী হাসান ফরাজী। যার মামলা নং ০৯।
মন্তব্য করুন