মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩৬ অপরাহ্ন

“স্থায়ীত্ব পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচারিত বিতর্কিত ইতিহাস ”

“স্থায়ীত্ব পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচারিত বিতর্কিত ইতিহাস ”

অনলাইন বিজ্ঞাপন

“মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসি স্থান সমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর” স্মৃতি ফলক নির্মাণের মাধ্য দিয়ে কক্সবাজারে ইনানী চেংছড়িতে স্থায়ীরুপ লাভ করতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্র হননমূলক প্রচারিত মিথ্যা, বিতর্কিত ও কাল্পনিক কথিত আত্মগোপন ইতিহাস। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ৩৪ লাখ ৯০ হাজর ৯২৯ টাকা ব্যয়ে উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেংছড়ি নামক স্থানে এটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে একদিকে যেমন প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত হয়ে বঙ্গবন্ধুর আপোষহীন চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধ হবে, তেমনি অন্যদিকে নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে বিতর্কিত ও ছোট করা হবে।

এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচারিত মিথ্যা, কাল্পনিক ইতিহাস বন্ধ করে প্রকৃত ইতিহাস প্রচারের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বঙ্গবন্ধুর চরিত্র হননমূলক গল্পটি প্রচারের পেছনে জামায়াত-বিএনপির গোপন এজেন্ডা বলেও মনে করছেন তারা।

তবে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কাল্পনিক কোন তথ্যের উপর বঙ্গবন্ধুর নামে কোন স্মৃতি জাদুঘর স্থাপন করা হবে না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, “১৯৫৮ সালে ৭ অক্টোবর ইস্কান্দর মীর্জা সামরিক শাসন জারি করেন। মাত্র ৪ দিনের মাথায় অর্থাৎ ১২ অক্টোবর শেখ মুজিবুর রহমানকে আটক করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় তাকে দেড়বছর বিনা বিচারে আটক রাখা হয়। কারাগারে আটকাবস্থায় তার বিরুদ্ধে ছয়টি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়”। প্রকৃত এ ইতিহাসকে আড়াল করে ‘১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারির পর শেখ মুজিবুর রহমান পালিয়ে কক্সবাজারের ইনানীর চেংছড়িতে আত্মগোপনে এসেছিলেন এমন একটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং বিতর্কিত ইতিহাস প্রচার করা হয়। আর এটি “মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসি স্থান সমূহ সংরক্ষণ ও ম্ুিক্তযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর” স্মৃতি ফলক নির্মাণের মাধ্য দিয়ে স্থায়ী রুপলাভ রুপ দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দাবি, পিতা মুজিবের চরিত্র হনন করতে জামায়াত-বিএনপির এজেন্টরা বঙ্গবন্ধুর নামে কথিত আত্মগোপনের ইতিহাসের আড়ালে কাল্পনিক গল্পটি প্রচার করেছেন।

২০১০ সাল থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাল্পনিক ইতিহাস প্রচার করা হলেও প্রকৃত ইতিহাস যাচাইবাছাইয়ের উদ্যোগ নেয়নি জেলা প্রশাসন। উল্টো বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের সাথে মিল নেই এমন কথিত আত্মগোপনের ইতিহাসের পক্ষে অবস্থান নেন তারা। এমনকি জেলা প্রশাসনের একটি রেজুলেশনে বলা হয় ১৯৭১’ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময় বঙ্গবন্ধু কক্সবাজারের ইনানী চেংছড়িতে অবস্থান করেছিলেন ! কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কথিত আত্মগোপন স্থানে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জাদুঘর স্থাপনের জন্য বাজেট চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন পাঠান।

জেলা প্রশাসনের আবেদনের প্রেক্ষিতে “মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসি স্থান সমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ প্রকল্প” নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টম্বর এ প্রকল্পের অনুমোদন প্রদান করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

কক্সবাজার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ লাখ ৯০ হাজর ৯২৯ টাকা। যার চুক্তিমূল্য ৩৩ লাখ ১৬ হাজার ৩৮২ টাকা। ‘মেসার্স লিমন কনস্ট্রাকশন’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চুক্তি বদ্ধ হয়েছেন। বর্তমানে স্মৃতি জাদুঘর স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচার পাওয়া ভিত্তিহীন, তথ্যহীন ও কাল্পনিক এ ইতিহাসের উপর নির্মিত প্রকল্পের কাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ও কক্সবাজার জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর, সাবেক ছাত্রনেতা এ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি বঙ্গবন্ধু কখনো পালিয়ে রাজনীতি করেন নি। জামায়াত বিএনপির দোষররাই জাতির পিতাকে নিয়ে এ ধরনের চরিত্র হনন মূলক প্রচারনা চালিয়েছে। কাল্পনিক কোন তথ্যের উপর পিতা মুজিবকে নিয়ে ইতিহাস হতে পারে না। এটি দ্রুত বন্ধ করা প্রয়োজন।

কক্সবাজার মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালিন সভাপতি জয় বাংলা বাহিনীর প্রধান মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। তাকে নিয়ে যেনতেন ইতিহাস প্রচার করা দু:খজনক। অথচ একটি চক্র নিজেদের স্বার্থহাসিলের জন্য বঙ্গবন্ধুর চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এ ধরনের মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। আমি আশা করবো কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কাল্পনিক ইতিহাস বন্ধ রেখে প্রকৃত ইতিহাসের উপর বঙ্গবন্ধুকে সম্মান্বিত করবেন।

জালিয়াপালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রুহুল আমিন চৌধুরী রাশেল বলেন, ১৯৫৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ইনানী রেস্ট হাউজে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন বলে একটি তথ্য পাওয়া যায়। স্মৃতি জাদুঘর যদি করতে হয়, ইনানী রেস্ট হাউজকে করতে হবে। এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে জেলা প্রশাসনকে স্বারকলিপিও প্রদান করেছি। তারপরও কেন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে বুঝতে পারছি না। এটি অত্যান্ত দু:খজনক।

জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। আমদের কাছে একটি তথ্য এসেছে যে, ১৯৫৮ সালে ১৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু একদিনের জন্য ইনানী রেস্ট হাউজে অবস্থান করেছিলেন। জাতির শ্রেষ্ট সন্তান বঙ্গবন্ধু পালিয়ে এসেছিলেন বলে কোন তথ্য আমরা পায়নি। জেলা প্রশাসন চাই বঙ্গবন্ধুর সঠিক ইতিহাস, ভিত্তিহীন ইতিহাস প্রতিষ্ঠা হউক এটি চাই না।

চেংছড়িতে স্মৃতিজাদুঘর স্থাপনের বিষয়টি জানেন না বলেও জানান জেলা প্রশাসক।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM