শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৪০ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এমনভাবে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে একটি অন্যটির পরিপূরক হতে পারে। তিনি বলেন, ‘একবার পরিকল্পনা (উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর) গৃহীত হলে সেগুলো সংহত করা এবং একে অপরের পরিপূরক হওয়া উচিত।’
গতকাল রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের সোনারগাঁও-বুয়েট লিংকের হাতিরঝিল অংশের পুনঃ অ্যালাইনমেন্টের পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা দেখার সময় এসব কথা বলেন।
উপস্থাপনাটি দেখার পর প্রধানমন্ত্রী নতুনভাবে নকশা করা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নকশায় তাঁর সম্মতি প্রদান করেন, যা পলাশীকে কাঁটাবন হয়ে বিয়াম (বিআইএএম) ভবনের দক্ষিণ অংশে হাতিরঝিল লেকের প্রান্তের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক আছে। আপনি এটা বাস্তবায়ন করতে পারেন (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সোনারগাঁও-বুয়েট লিংকের হাতিরঝিল অংশের পুনঃ অ্যালাইনমেন্ট)।’
পূর্ববর্তী প্রস্তাবে হাতিরঝিল লেক ও পান্থকুঞ্জের মাঝামাঝি বরাবর এই লিংকের অ্যালাইনমেন্টের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী লেক (হাতিরঝিল) ও পান্থকুঞ্জকে সুরক্ষা করে নতুনভাবে নকশা প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এই সংযোগের ফলে পুরান ঢাকা ও ধানমণ্ডির বাসিন্দারা উপকৃত হবে এবং এটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ শতাংশ যানবাহন প্রবেশ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদা মতিঝিলে একটি বড় ঝিল (জলাশয়) ছিল, তবে পাকিস্তানি শাসক আইয়ুব খান তা ধ্বংস করেন। তিনি এ সময় উন্নয়ন পরিকল্পনায় সংশ্লিষ্টদের জলাশয় বিশেষ করে পুকুর রক্ষা করে পরিকল্পনা প্রণয়নেরও নির্দেশ দেন।
ঢাকা শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে আমরা নগরীর সমস্ত সুযোগ-সুবিধা গ্রামে দিচ্ছি। কাজেই গ্রামের মানুষের রাজধানীমুখী প্রবণতা কমে আসছে।’ সরকারি কর্মকর্তাদের শহরে বসবাসের মানসিকতার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা এখন শহরে থাকতে চান। তাঁদের বদলি করা হলে তাঁদের পরিবারকে শহরে রেখে নিজেরাই কেবল কর্মস্থলে যান।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অতীতে জেলার স্কুল, কলেজ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হয়েছে; কেননা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং সরকারি কর্মকর্তারা জেলায় থাকতেন।
জনগণের ট্রাফিক আইন মেনে না চলার মানসিকতার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ফুট ওভারব্রিজ বা আন্ডারপাস থাকার পরও জনগণ রাস্তা দিয়ে পারাপার হচ্ছে, পথচারী এবং চালক কেউই জেব্রাক্রসিং মানছেন না।’
৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি পিপিপি প্রকল্পের আওতায় আট হাজার ৯৪০ দশমিক ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ ৫৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রকল্পের সার্বিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে ১৮ শতাংশ। তিনটি ধাপে প্রকল্পটি সম্পন্ন হবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী) পর্যন্ত।
যোগাযোগবিদ এবং বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক মো. শামসুল হক অনুষ্ঠানে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সোনারগাঁও-বুয়েট লিংকের হাতিরঝিল অংশের পুনঃ অ্যালাইনমেন্ট প্রকল্পের প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন। প্রকল্প বিশেষজ্ঞ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং প্রকল্পের স্থপতি সদস্য ইকবাল হাবিব এ সময় প্রকল্প সম্পর্কে তাঁদের অভিমত দেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, পিএমওর এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, পিএমও সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রেসসচিব ইহসানুল করিম এবং সেতু বিভাগের সচিব মো. বেলায়েত হোসেন এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জয়িতা টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য ভবনের সংশোধিত স্থাপত্য নকশা প্রত্যক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। নকশা প্রত্যক্ষকালে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও প্রদান করেন। নকশা উপস্থাপন করেন জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান।
এ সময় মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রেসসচিব ইহসানুল করিম এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আরা অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। সূত্র : বাসস/কালেরকণ্ঠ
মন্তব্য করুন