মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ০৮:৩১ অপরাহ্ন

ইয়াবার গডফাদার হাজী সাইফুল করিমের অজানা কাহিনী !

ইয়াবার গডফাদার হাজী সাইফুল করিমের অজানা কাহিনী !

অনলাইন বিজ্ঞাপন

কক্সবাজার ৮ মে ১৯
ফটকা ব্যবসা থেকে হঠাৎ হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়ায় টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী হাজী সাইফুলের উত্থান রুপকথার কাহিনীকেও হার মানায়। অস্বাভাবিকভাবে টাকার মালিক হওয়া সাইফুলের রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত হওয়ার গল্প আমাদের কাছে ধরা পড়ে। তার হাত ধরেই দেশব্যাপী মরন নেশা ইয়াবার বিস্তার ঘটেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। ইয়াবা এ ব্যবসার সাথে তার গোটা পরিবার জড়িত বলেও অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
এক সময় চট্টগ্রাম নগরীর খাতুনঞ্জ এলাকার ফটকা ব্যবসায়ী এস কে গ্রুপ, এস কে ইন্টারন্যাশনাল নামে দুইটি ব্যবসা প্রতিষ্টান গড়ে তুলেছেন। মাদকের তকমা আড়াল করতে ব্যবসা দুটি গড়ে তোলে হয়েছেন দুই বার সর্বোচ্চ করদাতা (সিআইপি)। তাছাড়া চট্টগ্রাম-ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন শহরে তার নামে বেনামে ব্যবসা, জমিজমা রয়েছে বলে জানা যায়।
তবে আশ্চর্য জনক ভাবে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা বিভাগের প্রত্যেক গোয়েন্দা রিপোর্টের শীর্ষে তার এবং পরিবারের অপর সদস্যদের নাম থাকলে ২০১৭ সালের পূর্বে তার বিরুদ্ধে দেশের কোথাও মাদক সংক্রান্ত কোন মামলার রেকর্ড পাওয়া যায়নি। তবে ২০১৭ সালের পরবর্তী কয়েকটা মাদক মামলার আসামী হয়েছেন হাজী সাইফুল। গেল মাসে দুদকের মামলা থেকে রেহাই পায়নি এই ইয়াবা রাজা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শিলবুনিয়া পাড়া এলাকার মো: হানিফ প্রকাশ হানিফ ডাক্তারের ছেলে সাইফুল করিম। চট্টগ্রাম মহসিন কলেজ পড়াশোনাকালীন সময় ১৯৯৮ সালের দিকে নগরীর খাতুনগঞ্জ এলাকায় টেকনাফের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের পণ্য বেচা বিক্রিতে সহায়তা করে খরচ যোগাতেন তিনি। এভাবেই কোন রকম অভাব অনটনে দিন চলতো তার । ঐ সময় তার দাদার বাড়ি মিয়ানমার মংডু এলাকার ইয়াবা ডন খ্যাত মিয়ানমারের মোস্ট ওয়ান্টেড মগা সুইবিন নামক এক আন্তর্জাতিক ইয়াবা কারবারীর সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। তার পৃষ্টপোষক্তায় ২০০০ সালের কাছাকাছি সময়ে টেকনাফ স্থল বন্দরে এসকে ইন্টার ন্যাশনালের নামে আমদানী কারক ও সি এন্ড এফ ব্যবসা শুরু করে। ২০০১ সালের দিকে সরকারের পালাবদলের সাথে সাথে টেকনাফ বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহর সাথে হাত মিলিয়ে তার বোন কে বিয়ে করে টেকনাফ স্থল বন্দর নিয়ন্ত্রনে নেয়।
স্থানীয় দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়,  বিএনপি নেতার আধিপত্য কাজে লাগিয়ে স্থল বন্দরে মিয়ানমার থেকে পণ্য অমদানীর আড়ালে কৌশলে ইয়াবা আমদানী শুরু করে। সে সময় দেশের আইন শৃংখলা বাহিনী ও সাধারন লোকের মাঝে ইয়াবা সম্পর্কে কিঞ্চিত ধারনাও ছিলোনা।
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তার পরিবারের ৫ ভাইয়ের মাধ্যমে স্থানীয় মাদক সিন্ডিকেট গড়ে চট্টগ্রাম কাজির দেউরী ভিআইপি টাওয়ারে অবস্থানরত তার মামা ইব্রাহীমের সাথে যৌথভাবে বানিজ্য পণ্যের সাথে টেকনাফ থেকে মাদকের চালান চট্টগ্রাম পাচার করা শুরু করে। উক্ত মাদকের চালান খাতুনগঞ্জ থেকে কৌশলে ইব্রাহীম দেশের অন্যান্য জায়গায় পাচার করে দেশ ব্যাপী বিশাল মাদক সিন্ডিকেট গড়ে কয়েক বছরের মাথায় ফটকা থেকে শিল্পপতি হিসেবে নাম উঠে আসে হাজী সাইফুলের।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র থেকে জানা যায়, নগরীর টেরী বাজার বিনয় ফ্যাশন নামে অভিজাত বিপনী বিতানের আড়ালে তার ভাই রফিকের মাধ্যমে মাদক ব্যবসার সমস্ত লেনদেন হয়। অভিযোগ রয়েছে,তার এসব ব্যবসায় ক্ষমতাসীন দলের এক সাবেক এমপি, টেকনাফের কিছু সংবাদকর্মী ও জেলার একজন সিনিয়র সাংবাদিক পরোক্ষ ভাবে সহায়তা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে তার এই ব্যবসা থেকে পিছিয়ে থাকেনি অপর ৫ ভাই মুন্না,রফিক,জেট করিম,মাহবুব,মিকি ও রাশেদ। ব্যবসা নির্ভিগ্ন করতে চট্টগ্রাম বার্তা টুয়েন্টিফোর নামক একটি বিতর্কিত পোর্টালের সম্পাদক পরিচয় দিয়ে বেড়াতেন জেড করিম,মাহবুব ও রাশেদ।অভিযোগ রয়েছে সাইফুল পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় চলতো সাংবাদিক ইউনিটি নামে সংগঠনটি। আবার এই সংগঠনের পৃষ্টপোষকতায় সাইফুল পরিবারের ইয়াবা ব্যবসা নিরাপদ থাকতো।বিভিন্ন সময় সাংবাদিক ইউনিটির সভাপতি,সম্পাদক ও এই সংগঠনের কয়েকজন কথিত সাংবাদিক নেতাদের সাথে গোপন বৈঠকের ছবি পাওয়া গেছে। এছাড়া রাশেদুল করিম উক্ত সংগঠনের সহ সম্পাদক ও তার অপর ভাই জেড করিম এই সংগঠনের উপদেষ্টা।এরা ইয়াবা ব্যবসা আড়াল করতে গোপনে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও খেলাধুলার জন্য অর্থায়ন করার অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়,সাইফুলের নেতৃত্বে ৫ ভাই দের সমন্বয়ে ব্যবসা নির্বিঘ্নে করতে ২০০৮ সালের দিকে টেকনাফে যাদের নিয়ে শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তুলে তারা হলো- মৌলভী পাড়া এলাকার হাজী ফজল আহাম্মদের পুত্র একরাম, আব্দুর রহমান ও রিদুয়ান। সদর উনিয়নের ছোট হাবির পাড়া এলাকার মৃত আমির আলীর পুত্র ছিদ্দীক আহাম্মদ,নজির আহাম্মদের পুত্র রশিদ আহাম্মদ ওরফে পরটা রশিদ, মৃত নুরুজ্জামার পুত্র ছৈয়দ আহাম্মদ, এশায়ার পুত্র আলী আহাম্মদ, মৌলভীপাড়ার গণি, লোকমান হাকিমের পুত্র বক্কর, বশির আহাম্মদের পুত্র আব্দু রাজ্জাক, মুসা আলীর পুত্র আব্দুল আমিন, ইব্রাহীম।
এছাড়া বড় হাবিরপাড়া এলাকার ইউপি মেম্বার মৌলভী সৈয়দ তার ভাই ইসলাম। শীলবুনিয়া পাড়া এলাকার আবুল হোসেনের পুত্র শামসু আলম। নাজিরপাড়া এলাকার ইসলামের পুত্র জিয়াউর রহমান, মোজাহার মিয়ার পুত্র এনামুল হক মেম্বার, হাজী কালা মিয়ার পুত্র ছৈয়দ হোসেন, এজাহার মিয়ার পুত্র খোকন, মৃত হাজী নজুমিয়ার পুত্র গুরা মিয়া,তার ব্যক্তিগত গাড়ি চালক রশিদ আহাম্মদের পুত্র মো.শরীফ, হোসাইন আহাম্মদের পুত্র মো.আলী,মৃত মোজাহার মিয়ার পুত্র সিরাজুল হক উরফে ব্ল্যাক চাঁন মিয়া,রফিক উরফে মাদার পোঁয়া রফিক,রফিকের পুত্র শহীদ উল্লাহ,কুলাল পাড়া এলাকার পৌর কাউন্সিলর সাইফুলের ভাগ্নি জামাই নুরশাদ,জালিয়া পাড়ার জোবাইর, একই এলাকার মোজাম্মেল, অলিয়াবাদ এলাকার আমির হোসেন ড্রাইভারের পুত্র রহিম, হারুন রশিদ,আরিফ।
পুরাতন পল্লানপাড়া এলাকার দিলু ড্রাইভারের পুত্র আব্দুল্লাহ, ডেইল পাড়া এলাকার রিক্সা শফিক,পূর্বগোদারবিল এলাকার আবুল কালাম।এই সিন্ডিকেটের সমন্বয় করতো তার সাবেক গাড়ী চালক অলিয়াবাদ এলাকার ছিদ্দিকের পুত্র সোনামিয়া বলে জানা গেছে।
তবে এদের মধ্যে কয়েকজন বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে এবং কয়েকজন আত্বসমর্পন করলেও অধিকাংশ আত্মগোপনে রয়েছে।
এদিকে সাইফুল করিম মাদক বিরোধী অভিযানের শুরুর থেকে গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে থাকলেও তার পরিবারের অপর সদস্যরা বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করলে এনিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা উঠে আসে। টনক নড়ে আইন শৃংখলা বাহিনীর।টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে গত ৩ মে ছদ্মবেশী সাংবাদিক নেতা মাহবুব ও রাশেদ কে টেকনাফ নিজ বাড়ি থেকে ১০ হাজার ইয়াবা ও ৪টি অস্ত্রসহ আটক করেছে পুলিশ।এর আগে বড় ভাই মুন্না গেলো বছর ইয়াবাসহ নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হন।এতোসব কিছুর পরও এখনো ধরাছোয়ার বাইরেই রয়েছে আলোচিত এই ইয়াবা রাজা সাইফুল।সে কখনো রেঙ্গুন, কখনো অস্ট্রেলিয়া রয়েছে বলে কৌশলে তার লোকজনের মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে দেয়।যাতে আইন শৃংখলা বাহিনী সে দেশের বাইরে রয়েছে মনে করে তাকে গ্রেফতার করতে চেষ্টা না চালায়।মূলত এভাবে কৌশল নিয়ে সে দেশের ভিতরে বসেই নিরাপদে ইয়াবার পাচার অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে।
তবে জেলা পুলিশ বরবারের মতোই বলছে ইয়াবার গডফাদারদে ছাড় দেয়া হবেনা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট।  সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
K/M/W/R


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM