আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার এক বছরেও তা পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি ছাত্রদল। আংশিক যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, গত এক বছরে তারা কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠকও করেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর কমিটিগুলো বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুমোদনের অপেক্ষায় গুলশান কার্যালয়ে পড়ে আছে।
অবশ্য ছাত্রদলের নেতারা বলছেন, ‘অস্বাভাবিক পরিবেশের’ কারণে কমিটিগুলো গঠন করা যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগরসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শাখার কমিটি চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর এসব কমিটি ঘোষণা করা হবে।
দল গোছানোর অংশ হিসেবে গত বছরের ১৪ অক্টোবর রাজিব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আংশিক ওই কমিটি ১৫০ সদস্যের। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রদলের কমিটি ১৫১ সদস্যের। কিন্তু এবার কমিটি ঘোষণার সময় বলা হয়, ২০১ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
কমিটি ঘোষণার পরপরই কমিটিতে জায়গা না পাওয়া নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ বিদ্রোহ করে। তারা নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও বর্তমান কমিটির সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়ায়। পরে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সে সময় ‘বিদ্রোহী’দের ছাত্রদলের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংগঠনটির কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি।
ছাত্রদলের সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় কমিটি এখনই পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে না। ছাত্রদলের যাঁরা ‘বিদ্রোহ’ করেছিলেন, তাঁদের অনেকে বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের চেয়ে বয়সে বড়। তাঁদের ছাত্রদলের কমিটিতে রাখার সম্ভাবনা কম। তাঁদের যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলে পদ দেওয়া হতে পারে। এ কারণে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি গঠনের পর ছাত্রদলের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পক্ষে সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, এখনই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে গেলে আবার সংগঠনের ভিতরে বিক্ষোভ দেখা দেবে।
২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর গত বছর নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হলেও অন্য শাখাগুলোতে কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এখন এসব শাখায় কমিটি নেই।
সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের একটি কমিটি প্রস্তাব করে রেখেছে বর্তমান কমিটি। কেন্দ্রীয় কমিটি সহসভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক পর্যায়ের দুজনকে প্রস্তাবিত কমিটিতে শীর্ষ দুটি পদে রাখা হয়েছে। বাকি পদগুলোতে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের রাখা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি এবং ছাত্রদল নিয়ে সক্রিয় সাবেক নেতাদের এমন একটি পক্ষ চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ছাত্রদের দিয়ে করতে। এর মধ্যে আবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান গ্রেপ্তার হন। এ দুই কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি আটকে যায়। সূত্র জানায়, এখনো প্রস্তাবিত ওই কমিটি নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের দিয়েই কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর ছাত্রদলকে এখন থেকে চার ভাগে ভাগ করার একটি চিন্তা আছে বিএনপিতে। ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি আগের হিসাবে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এই দুটি শাখার দুটি কমিটি প্রস্তাব করেছে। শেষ পর্যন্ত ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম—এ চারটি শাখায় ভাগ করে কমিটি দেওয়া হতে পারে।
ছাত্রদলের সূত্র জানায়, এসবের বাইরে জেলা কমিটিগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে। গড়ে সাত বছর ধরে জেলায় কমিটি করা হচ্ছে না। ফলে মাঠপর্যায়ে সংগঠন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সংগঠনটির একজন সহসভাপতি নামপ্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার বাইরে সরকারি কলেজগুলোতে ছাত্রদলের কমিটি নেই। যে কারণে তাঁরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট ডাকতে পারেন না। ডাকলেও কর্মসূচি সফল হয় না।
জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দায়িত্ব গ্রহণের পর একটি বড় আন্দোলন মোকাবিলা করতে হয়েছে। এরপর থেকে পুলিশের হামলা-মামলা-নির্যাতন চলছে। তাঁদের সভাপতি দীর্ঘদিন থেকে কারাবন্দী। সব মিলে তাঁরা ‘অস্বাভাবিক’ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আছেন। যে কারণে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা যায়নি। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগরের কমিটি চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে কমিটি ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া ঢাকার বড় সরকারি কলেজগুলো এবং গাজীপুর জেলা ও মহানগরের কমিটি গঠনের কাজ চলছে। এরপর পর্যায়ক্রমে জেলা কমিটিগুলো গঠন করা হবে।
আকরামুল হাসান স্বীকার করেন গত এক বছরে তাঁদের কোনো বৈঠক হয়নি। তবে তিনি বলেন, পরিস্থিতির কারণে তাঁরা বৈঠক করতে পারছেন না। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
সূত্র-প্রথম আলো
মন্তব্য করুন