বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন
কক্সবাজার ২০ এপ্রিল ১৯
অতিমাত্রায় পানি ব্যবহারের ফলে ভ‚-গর্ভে পানির স্তর নিচে নামছে (উখিয়া-টেকনাফ) রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায়। শুকিয়ে বনভ‚মি পরিণত হতে পরে বিরান ভুমিতে। যার প্রভাব পড়তে পারে পরিবেশের উপরও। ফলে পানি দুষণ, রোগ ব্যাধি বৃদ্ধি, খরা ও পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ রোপসহ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীরা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু উখিয়া-টেকনাফে নয়, পুরো জেলায় তিব্র পানি সংকট দেখা দিতে পারে আগামি কয়েক বচরের মধ্যে। ফলে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়তে পারে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায়।
ইতিমধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় পানির স্তর নিচে নামছে স্বীকার করেছেন কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হৃত্তিক চৌধুরী। তিনি বলেন, অতিমাত্রায় পানি ব্যবহারের ফলে ধীরে ধীরে পানির স্তর নিচে নামবে এটিই স্বাভাবিক।
কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের শেষের দিকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। ঐ সময় জরুরী অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য গীভর ও অগভীর মিলে ২১৯২টি নলকুপ স্থাপন করা হয়েছিলো। যার মধ্যে ১০০০ হাজার গভীর এবং ১১৯২ টি অগভীর নলকুপ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যক্তিগতভাবে স্থাপন করা হয়েছিলো হাজার হাজার নলকুপ। রোহিঙ্গা সংকটের শুরুতে উখিয়া টেকনাফের ৩২ টি ক্যাম্পে মাত্র ২০ ফুটের ভেতরে পানি পাওয়া যেত। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে ৭০ ফুটের মধ্যে পানি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। অনেক স্থানে কয়েকশত ফুট নিচেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সংকটকালিন সময়ে বসানো অগভীর নলকুপের সিংহভাগ নলকুপ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পরিক্ষা করে দেখা গেছে কিছু কিছু নলকুপে ব্যাকটেরিয়ার জীবানু পাওয়া গেছে। তবে তা উদ্বেগজনক নয় বলে দাবি করেছে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অপরদিকে কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে স্যালাইন পানি পাওয়া যায়। এ অবস্থায় অতিমাত্রায় ভূগর্ভের পানি বেশি উত্তোলনের ফলে এসব স্থানে মিষ্টি পানির পরিবর্তে লবনাক্তত পানি পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে খাওয়ার পানির সংকটের পাশাপাশি কৃষি খাতে পানির সরবরাহ কমে যাবে।
তবে, পানি সংকট দুর করতে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে নতুন করে ৫’শ গভীর নলকুপ বসানো হয়েছে। একই সাথে সার্ফেস ওয়াটার সরবরাহের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-সহকারি প্রকৌশলি কামরুল হাসান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একজন লোকের প্রতিদিন গড়ে ৩০ লিটার পানির প্রয়োজন। সে হিসেবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আনুমানিক ৮৬ লাখ ২৫ হাজার গ্যালেন পানি প্রয়োজন। যা সরবরাহ করা কঠিন। প্রতিদিনের এ চাহিদা মেঠাতে মাটির নিচ থেকে পানি উত্তোলন করা হয়। এছাড়া স্থানীয় বসবাসকারি লোকজন আছে আরো কয়েক লাখ। এ অবস্থায় ভবিষ্যত পানি সংকট তিব্র থেকে তিব্রতর হতে পারে। এ বিষয়টি অনুধান করে সার্ফেস ওয়াটার সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উখিয়া-টেকনাফের সাড়ে ছয় হাজার একর সবুজ বনায়ন ধ্বংস হওয়ায় তিব্র উত্তাপ দেখা দিবে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায়। তিব্র তাপদাহে অতিরিক্ত পানির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ভ‚-গর্ভের পানি উত্তোলন বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে দিন দিন পানির স্তর নিচে নামবে। এ অবস্থায় সমুদ্রের লবনাক্ত পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। যা মানুষের জীবন ধারনের জন্য অনুপযোগী।
কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হৃত্তিক চৌধুরী বলেন, বিশাল জগোষ্ঠির জন্য পানি সরবরাহ করা কঠিণ। প্রতিদিন যে পরিমাণ পানি ব্যবহার হচ্ছে এক সময় ভ‚-গর্ভের পানি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তাই গবেষণার মাধ্যমে দ্রুত সমস্যা সমধানের জন্য পাশাপাশি সার্ফেস ওয়াটার সরবরাহ করছি।
তিনি বলেন, পানি সংকট দুর করার পাশাপাশি সার্ফেস ওয়াটার নিয়ে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার আইওএম এবং ইউএনএইচসিআরের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণা কাজ শুরু করেছেন। আশা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।
ইতিমধ্যে গবেষণার পাশাপাশি ক্যাম্পে সার্ফেস ওয়াটার সরবরাহের উপর গুরুত্ব দিয়ে টেকনাফের দমদমিয়া-১ ও দমদমিয়া-২ ক্যাম্প, হোয়াইক্যং এলাকায় এবং উখিয়ার শালবাগান নামক স্থানে সার্ফেস ওয়াটার সরবরাহ করা হচ্ছে।
ওয়াহিদুর রহমান রুবেল, ২২ এপ্রিল ১৯
মন্তব্য করুন