শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:০৪ অপরাহ্ন
ওয়াহিদুর রহমান রুবেল:
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি কক্সবাজার সরকারি কলেজে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে শিবিরের সাথে আদর্শের প্রতিযোগিতা করেছি। শিক্ষা, শান্তি আর প্রগতির নিশান উড়াতে গিয়ে তাদের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে অনেক বার। আহত হয়েছে আমার অনেক অনুজ। মৃত্যুর হুমকি পেয়েছি অনেকবার। উড়ো চিঠি দেয়া হয়েছে। আমাকে দমাতে না পেরে অনেকবার মা বাবার কাছেও হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু আদর্শের সংগ্রামে কখনো থেমে থাকিনি। কলেজে শিবিরের উত্তাল যৌবনের বিরুদ্ধে আমার আদর্শের তারুন্যকে কখনো পরাজিত হতে দেয়নি। পাওয়া না পাওয়ার হিসেবে করিনি কখনো। লক্ষ্য ছিলো সাম্প্রদায়িকতার আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা কলেজে শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির পতাকা উড়াতে হবে।
একজন শিক্ষার্থী যে সময়েটাতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে, সে সময়ে আমি বা আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ার সংগ্রামে ছিলাম। পেছনে ফিরে নিজেকে নিয়ে ভাবার সময়ও পায়নি। বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা আর ছাত্রলীগ ছিলো চিন্তা মননে। কতটুকু পেরেছি তা জানিনা। তবে শিক্ষার সংগ্রামে, শান্তির বানী নিয়ে প্রগতির কথা বলতে একটুও ক্লান্ত ছিলাম না। যাদের বিরুদ্ধে আমার বা আমাদের সংগ্রাম ছিলো তারাই আজ আমাদের চোখে অাঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আদর্শ নয়, অর্থই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। কলেজে শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করতে গিয়ে হামলা হয়।
আমি বাদি হয়ে মামলা করি। সে মামলার আসামি সরকারি চাকুরি পায়। আর যারা ছাত্রলীগের স্লোগান ধরেছিলো তারা হারিয়ে যায়। যে ছেলেটি সারাদিন জয় বাংলা, বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনার কথা বলে বেড়িয়েছে, সে ছেলে কেন টাকা দিয়ে চাকুরি নিবে ? আজ অনেকদিন পর জীবনের হিসেবের খাতাটা খোলা হয়। যদিও সেখানে শুণ্য ছাড়া আর কিছুই নেই। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র আছে কিন্তু মানা হয়না। ফলে সঠিক সময়ে সম্মেলনও পায়নি। যখন জেলা ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দেয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম তখন অপরাজনীতির শিকার হয়েছি। কথিত সিন্ডিকেটের কতেক নেতাও আমাদের কক্সবাজারের ছাত্রলীগকে অক্টোপাশের মতো দখল করে রেখেছিলো। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেয়ার একটি স্বপ্নই আমার জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছি সবকিছু। এখন বয়সও নেই যে একটি সরকারি চাকুরি পাবো। আদর্শিক কর্মী হতে গিয়ে কখনো অপরাধের সাথেও জড়িয়ে পড়িনি।
কিন্তু সমসাময়িক রাজনীতি কিংবা সমাজনীতিতে টাকা ছাড়া কিছুই হয়না। সবকিছুই যেন অর্থনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রীত হয়। আজ আমার ইচ্ছা হয়েছে আপনার কাছে কিছু চাইবো। আপনার আশেপাশের লোকজন বিএনপির নেতাদের যেভাবে সহযোগিতা পাইয়ে দিচ্ছে। তাতে আপনার একজন কর্মী হিসেবে আমার স্বাদ জাগতেই পারে। দলের পদবীধারী কোটি টাকার মালিক নেতারাও আপনার কাছে সাহায্য নিচ্ছে। সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের মতো লাখ লাখ অসহায় কর্মীর ইচ্ছা জাগবেই। আজ মনে হচ্ছে জীবনের পাওয়ার হিসেবটাই মন দেয়া জরুরী ছিলো।
আপা আপনি কি জানেন আপনার চারপাশে থাকা লোকগুলো আমাদের কোন খবর নেয় না। কিন্তু তারাই বড় বড় কথা বলে। আমার বা আমাদের কথা আপনার কাছে পৌঁছবে না। কারণ আমরা রাজপথের আদর্শীক কর্মী। অনৈতিক সুযোগ সুবিধা নিতে বা দিতে জানিনা বলেই আমরা অবহেলিত। মানিক বৈরাগী নামে সাবেক জেলা ছাত্রলীগের এক বড়ভাই পুঙ্গু জীবন যাপন করছে। তার অসহায়ত্বের কথা আপনার কাছে পৌঁছেনা। তাই তো আপনার সহযোগিতার জন্য অনশনে বসতে হয়েছে তাকে। তারপরও আপনার কাছে মানিকের অসহায়ত্বের কথা পোঁছেনি। জানি পোঁছবেও না। তবে, নেতারা অনেক আশ্বাস দিয়েছিলো তাকে। তার জন্য (যোগ্য মতো) একটি স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা জরুরী। অন্যথায় আপনার সত্যিকারের কর্মীরা এভাবে হারিয়ে যাবে।
চুয়াডাঙ্গার এক কর্মীকে দেখেছি ছেলেটি বঙ্গবন্ধুর ছবি বুকে আগলে রেখে সমগ্র দেশ ঘুরে বেড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নামে হাজার কবিতা রচনা করে টাকার অভাবে তা প্রকাশ করতে পারেনি অনেক বছর। পরে অবশ্য ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এরশাদুর রহমান চৌধুরীর সহযোগিতায় বইটি প্রকাশ করেছিলো। আর সে বই নিয়ে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া ঘুরে বেড়িছে। ছেলেটি ছিলো পুঙ্গু। বিএনপি জামায়াতের ছেলেরা তাকে পুঙ্গু করেছিলো। তার খবরও কেউ রাখেনি। সর্বশেষ আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আপনি আমাদের বিশ্বাসের ঠিকানা। আপনি না থাকলে এ বাংলাদেশ অন্ধারে পতিত হবে চুড়ান্তভাবে এটি নিশ্চিত। তাই মাঠের কর্মীদের খবর নিতে নিদের্শ দিন।
লেখক-সাবেক ছাত্রনেতা। ২২ এপ্রিল ২০১৯
মন্তব্য করুন