আলোকিত কক্সবাজার ডেক্স ॥
মানুষের আবেগের ইতিহাস লিখে এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন বেলারুশের সাংবাদিক এবং লেখিকা স্বেতলানা আলেক্সিয়েভেচ। সুইডেনের স্টকহোমে পুরস্কারের ঘোষণার সময় নোবেল কমিটি সুইডিশ একাডেমির প্রধান সারা ডানিয়াস বলেছেন, তার লেখা ‘এ মনুমেন্ট টু কারেজ অ্যান্ড সাফারিং ইন আওয়ার টাইম’ এর জন্য এই পুরস্কার দেয়া হলো। নোবেল পুরস্কার পাওয়া নারীদের মধ্যে আলেক্সিয়েভেচ চতুর্দশতম। আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে এক অনুষ্ঠানে আলেক্সিয়েভেচের হাতে ৮০ লাখ ক্রোনার তুলে দেয়া হবে। খবর বিবিসি ও আনন্দবাজার পত্রিকার।
প্রায় অর্ধশতাব্দী পর এই প্রথম কোনো সাহিত্যিক নন-ফিকশন বা কল্পনার বাইরে লিখে নোবেল জয় করলেন। স্বেতলানা আলেক্সিয়েভেচ মূলত সাংবাদিক, লেখেন রুশ ভাষায়। সংবাদ এবং সাহিত্যের সীমারেখা আজ যখন ভেঙেচুরে, মিলেমিশে একাকার, স্বেতলানার পুরস্কার নিয়ে এল বহু স্বরের প্রতীক। মানবতার বহু স্বর! দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে রুশ মহিলাদের অবদান নিয়ে আটের দশকে তাঁর ‘ওয়ার্স আনউওম্যানলি ফেস’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তুমুল সাড়া জাগিয়েছিল। তারপর কখনো আফগানিস্থানে সোভিয়েত সেনার জীবন নিয়ে ‘জিঙ্কি বয়েজ’, কখনও বা চেরনোবিল-দুর্ঘটনা নিয়ে ‘ভয়েসেস ফ্রম চেরনোবিল।’ সাংবাদিকতার পেশাদারি প্রস্তরভূমির ওপর দাঁড়িয়ে স্বেতলানা বারংবার তুলে এনেছেন মানুষের বেঁচে থাকার যন্ত্রণা। তাঁর চেরনোবিল সংক্রান্ত বইয়ে তাই পরিষ্কার লিখেছিলেন, ‘সোভিয়েত এবং? সোভিয়েত-উত্তর দুই জমানাই আসলে বিশাল বধ্যভূমি। আততায়ী এবং শিকার দুই পক্ষে সেখানে চিরন্তর কথোপকথন। সোভিয়েত বিপ্লব, স্তালিনের আমলের গুলাগ, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, আফগানিস্থান, চেরনোবিল…কখনই পরিবর্তন ঘটে না। এ যেন এক মহাজাগতিক চ্যালেঞ্জ। আর এটাই আমাদের ইতিহাস।’ ইউক্রেন সমস্যার এই সময়ে স্বেতলানার পুরস্কার কোথাও রুশ প্রিমিয়ার পুতিনের কাঁটা হয়ে থাকল না তো? নোবেল কমিটি অবশ্য তাদের ঘোষণায় সাফ জানিয়েছে, ‘স্বেতলানার বইগুলি কোনও ঘটনার ইতিহাস নয়। মানুষের আবেগের ইতিহাস।’
রাশিয়ার ব্যক্তি-মানুষের আবেগের ইতিহাস লিখতে গিয়েই তো বেলারুশের এই মেয়ে বারংবার শাসকের গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধেছেন। তাঁর বইটি যখন প্রথম প্রকাশিত হয়, তখন রাশিয়ায় এটা ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। তার বেশ সমালোচনা হয়েছিল। তিনি বেলারুশে সরকারের একজন সমালোচক হিসেবেই পরিচিত। তার মোবাইলে আড়িপাতা হতো। এমনকি তিনি প্রকাশেও আসতে পারতেন না। তিনি ২০০০ সাল থেকে ইউরোপে নির্বাসিত জীবন-যাপন করেছেন। চার বছর আগে মিনস্কে ফিরে আসেন তিনি। আলেক্সিয়েভেচের বাবা বেলারুশের, মা ইউক্রেনের। ১৯৪৮ সালে এই ইউক্রেনেই জন্ম নোবেলজয়ী লেখিকার। বাবা সেনা-অফিসার ছিলেন, অবসরের পরে চলে আসেন বেলারুসের মিনস্ক শহরে। সেখানেই স্বেতলানার বেড়ে ওঠা, সেখানকার ‘নেমান’ পত্রিকাতেই সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। ১৯৮৫ সালে তার প্রথম বই ‘ওয়ারস আনউইম্যানলি ফেইস’ প্রকাশিত হয়। তিনি ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অব মিনস্কে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়ালেখা করেন। সুইডিশ একাডেমির ফোনে পুরস্কারের খবর শুনে অভিভূত লেখিকার প্রতিক্রিয়া, ‘ফ্যান্টাস্টিক।’
মন্তব্য করুন