বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:০০ পূর্বাহ্ন
আলোকিত কক্সবাজর ডেক্স:
নতুন জাতীয় বেতন কাঠামোতে সিলেকশন গ্রেড না রাখায় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজগুলোর শিক্ষকদের মধ্যে যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে তা নিরসন করার পথ খুঁজছে সরকার। কোন প্রক্রিয়ায় ন্যায্য সমাধান হবে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। দেশে বর্তমানে সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার মতো অধ্যাপক পদ রয়েছে ১০০৮টি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, অধ্যাপকদের সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল দাবিতে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজগুলোর শিক্ষকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের দাবির সম্মানজনক সমাধান খুঁজতে গিয়ে এ-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের সঙ্গে কী পরিমাণ অর্থের সম্পর্ক রয়েছে সে সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত তারা তা জানাতে পারেনি। সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল না করে সিনিয়র অধ্যাপক পদ সৃষ্টি করা যায় কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা নিরসনের জন্য গত সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশনা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফির ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। শিক্ষকদের সমস্যা নিরসনের জন্যও কাজ শুরু করেন কর্মকর্তারা। সোমবার বিকেলেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছুটে যান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। তাঁরা অনেক রাত পর্যন্ত অবস্থান করে ইউজিসির কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। গতকাল বিকেলেও বৈঠক করেছেন দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) হেলাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিক্ষকদের দাবি পূরণের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে মূলত মন্ত্রিসভা কমিটি। আমরা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করছি। পাশাপাশি আমরা আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। আশা করছি অচিরেই একটি সম্মানজনক সমাধানে পৌঁছানো যাবে।’
কর্মকর্তাদের সংগৃহীত তথ্য অনুসারে দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ হাজার ২৮১টি শিক্ষক পদ রয়েছে। এর মধ্যে অধ্যাপক আছেন তিন হাজার ৪৩১ জন। ইমেরিটাস ও সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক ১৫৬ জন। নিয়ম অনুসারে অধ্যাপকদের মধ্য থেকে ২৫ শতাংশ সিলেকশন গ্রেড পেয়ে থাকেন। সেই হিসাবে বর্তমানে সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার মতো অধ্যাপক আছেন ৮৫৭ জন।
এদিকে সরকারি কলেজ পর্যায়ে অধ্যাপক পদ সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সংগৃহীত তথ্য অনুসারে অধ্যাপক পদ রয়েছে ৩০৩টি। ক্যাডার সিডিউল অনুসারে ৫০ শতাংশের সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার কথা। সে হিসাবে সিলেকশন গ্রেডে অধ্যাপকের পদ দাঁড়ায় ১৫১টি। কিন্তু বাস্তবে সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপক কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৪২ জন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন এ তথ্য জানান।
নতুন ঘোষিত অষ্টম বেতন কাঠামোতে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দেওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সপ্তম বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপকদের অবস্থান ছিল সচিবদের মতো সর্বোচ্চ গ্রেড-১-এ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সিলেকশন গ্রেড পেয়ে গ্রেড-১-এ পৌঁছতেন। নতুন বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড বাতিল হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আর কখনোই সচিব পদমর্যাদার গ্রেড-১-এ পৌঁছতে পারবেন না। এ ছাড়া নতুন বেতন কাঠামোতে গ্রেড-১-এর ওপর মন্ত্রিপরিষদসচিব, মুখ্যসচিব ও সিনিয়র সচিবদের রাখা হয়েছে আরো দুটি বিশেষ গ্রেডে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, নতুন বেতন কাঠামোতে চতুরতার সঙ্গে শিক্ষকদের চার ধাপ নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যাঁরা সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপক আছেন তাঁরা গ্রেড-১-এ সচিবদের সমতুল্য বেতন পাবেন ঠিকই, কিন্তু যাঁরা সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপক নন, কিংবা নতুনভাবে অধ্যাপক হবেন তাঁদের পক্ষে গ্রেড-১-এ যাওয়ার আর সুযোগ থাকবে না, যা সপ্তম বেতন কাঠামোতে ছিল। সিলেকশন গ্রেড অবলুপ্তির মধ্য দিয়ে অধ্যাপকদের গ্রেড-১-এ যাওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হলো।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন বলেন, সিলেকশন গ্রেড বাতিল করার কারণে অধ্যাপকরা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
শিক্ষকদের সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল ও স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবিতে দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবারও ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালন করার কথা। একই সঙ্গে সরকারি কলেজের শিক্ষকরাও কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। দ্বিতীয়বারের মতো ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর কর্মবিরতি পালন করবেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সূত্র-কালেরকন্ঠ
মন্তব্য করুন