সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০৯ পূর্বাহ্ন
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জয় মঙ্গলবার ওয়াশিংটন টাইমসের অনলাইন সংস্করণের মতামত বিভাগে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে একথা বলেন। নিবন্ধে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে সম্প্রতি ঢাকার পল্লবীর একটি বাড়ি থেকে দলটির সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ ১৩ নেতাকর্মীর অস্ত্র-বোমাসহ ধরা পড়ার কথা বলেন জয়।
গত ৭ সেপ্টেম্বর জামায়াতের সাবেক সাংসদ মজিবুর রহমান ও মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ ওই ১৩ জনকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ ২০টি হাতবোমা, বাঁশের লাঠি এবং উগ্রপন্থি বই পাওয়ার কথাও জানিয়েছিল।
পুলিশের বরাত দিয়ে জয় তার নিবন্ধে বলেছেন, কোরবানির ঈদ ঘিরে তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা তৈরির লক্ষ্যে হামলার জন্য ওই সব বোমা সংগ্রহ করেছিলেন জামায়াতের নেতা-কর্মীরা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জয় জামায়াতকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে ঘোষণা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিধা করা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন।
শান্তিকামী বেসামরিক জনগণের ওপর হামলা জামায়াতের জন্য ‘নতুন কিছু নয়’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীপুত্র ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, হিন্দু সম্প্রদায় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর দলটির হামলার কথা তুলে ধরেন।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে গিয়ে মুক্তিকামী বাঙালির বিরুদ্ধে দাঁড়ায় জামায়াতে ইসলামী। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবন, দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা পায় বাঙালি।
জামায়াতের হামলার পরিকল্পনা নস্যাতের ঘটনাটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে যেসব উগ্রপন্থি সহিংসতা ঘটেছে তারই ধারাবাহিকতা বলে মনে করছেন জয়।
তিনি লিখেছেন, “চার মুক্তমনা ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখেন এমন অনেকে এটা জেনে বিস্মিত হননি যে, নিহত ব্লগাররা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতাদের সর্বোচ্চ শাস্তির পক্ষে লিখেছিলেন।
“ট্রাইব্যুনালের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাড়িয়েছে জামায়াতে ইসলামী, সারা দেশে শত শত বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তারা। তাতে প্রাণ হারিয়েছেন পূর্ণ বয়স্ক থেকে শিশুরা।”
স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে জয় বলেছেন, পল্লবী থেকে গ্রেপ্তার জামায়াতের সাবেক দুই সাংসদই বর্তমানে দলটিকে চালাচ্ছিলেন।
“এটা সত্য হয়ে থাকলে ঘটনাটি এ বিষয়কে ইঙ্গিত করে যে, একবার পরাজিত, মৌলবাদী, সন্ত্রাসী সংগঠন আবার বাংলাদেশকে আঁকড়ে ধরছে, যারা বৈধ রাজনৈতিক দলের ছদ্মবেশে এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।”
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশে কর্মকাণ্ড বিস্তৃত করার ঘোষণার সঙ্গে বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার যোগসূত্র আছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
গতবছর সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ৫৫ মিনিটের এক ভিডিওবার্তায় আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি দক্ষিণ এশিয়ায় ‘জিহাদি পতাকা তুলে’ ধরতে বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান।
জামায়াত নেতৃত্ব কখনও তাদের লক্ষ্য আড়াল করার চেষ্টা করেনি-মন্তব্য করে জয় বলেন, “তারা (জামায়াত) এবং তাদের সহযোগীরা তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রলোভন দেখিয়ে দলে ভিড়িয়েছে এবং তারা বাংলাদেশে একটি মোল্লাতন্ত্রের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলা জামায়াত প্রমাণ করেছে, যে কোনো উপায়েই তারা এটা করতে চায়।”
নিবন্ধের শুরুতেই ইরাক-সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখলে নিয়ে খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া ইসলামিক স্টেটের প্রসঙ্গ এনেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তবে বাংলাদেশে যাতে সে ধরনের কিছু না ঘটে তা নিশ্চিত করতে সরকারের সচেষ্ট থাকার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা।
জয় বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের একটি স্থিতিশীল ও সন্ত্রাসমুক্ত দক্ষিণ এশিয়া দরকার। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় রয়েছে- শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক এবং সেক্যুলার আইনের মাধ্যমে পরিচালিত।
বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ঘনিষ্ঠ সহযোগী’ হিসাবে উল্লেখ করে জয় বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়াকেন্দ্রিক পররাষ্ট্র নীতিতে বাংলাদেশকে কেন্দ্রে রাখা উচিত। কারণ জাতীয় নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বার্থের সুযোগও তৈরি করছে দেশটি। সূত্র-দৈনিক আমাদের সময়
মন্তব্য করুন