আলোকিত কক্সবাজার ডেক্স॥
ইকলাখ-কাণ্ড নিয়ে সমাজবাদী পার্টি (এসপি) জাতিসংঘের দ্বারস্থ হতে চলেছে। উত্তর প্রদেশ সরকারের মন্ত্রী ও সমাজবাদী পার্টির শীর্ষ নেতা আজম খান আজ সোমবার লখনৌয়ে বলেছেন, ন্যায়বিচারের আশায় তিনি জাতিসংঘের দ্বারস্থ হবেন। সে জন্য ইতিমধ্যেই তিনি জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল বান কি মুনের কাছে সময় চেয়েছেন।
দিল্লির লাগোয়া উত্তর প্রদেশের নয়ডায় বিসাদা গ্রামে গত সপ্তাহে একটা বাছুর জবাইয়ের গুজবের বলি হন মুহম্মদ ইকলাখ। সেই ঘটনায় তাঁর ছোট পুত্র দানিস গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
গো-হত্যার অভিযোগে ইকলাখ-খুনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতি সেই থেকে সরগরম। আজম খান এই ঘটনাকে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সঙ্গে তুলনা করে সোমবার বলেন, বিজেপি ও আরএসএস ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করতে চলেছে। ইকলাখ হত্যা তারই একটা ধাপ। তিনি বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষ ভারত যদি হিন্দুরাষ্ট্র হয়ে যায়, তা হলে এ দেশে মুসলমানদের ভূমিকা কী হবে?’ তিনি বলেন, জাতিসংঘে তাঁরা এটাই জানতে চাইবেন।
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ সিং যাদব ইতিমধ্যেই ইকলাখের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সবরকমের সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ৪৫ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। দানিসের চিকিৎসার দায়িত্বও সরকার নিয়েছে। রাজ্য বিজেপি নেতারা আবার এই সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত। তাঁরা বলছেন, রাজ্য সরকার মুসলিম-তোষণের রাজনীতি শুরু করেছে। স্থানীয় বিজেপি নেতাদের আরও ক্ষোভ, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৭ জনই বিজেপি পরিবারের সদস্য। মুজফফরনগরের দাঙ্গায় অন্যতম অভিযুক্ত জামিনে মুক্ত বিজেপির বিধায়ক সঙ্গীত সোম বিসাদা গ্রামে গিয়ে অভিযুক্তদের পরিবারের সঙ্গে গতকাল রোববার দেখা করেন। সেখানে তিনি বলেছেন, নির্দোষ যুবকেরা শাস্তি পেলে দল তার উপযুক্ত জবাব দেবে।
গো-হত্যা ও নরহত্যা নিয়ে রাজনীতির এই চাপান-উতোরের মধ্যেই হতে চলেছে বিহারের নির্বাচন এবং সেখানেও উন্নয়নের স্লোগানকে পেছনে ফেলে সামনে চলে এসেছে গরুর রাজনীতি। বিজেপি জিতলে যাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, সেই সুশীল কুমার মোদি বলেছেন, দল বিহারে সরকার গড়লে গোটা রাজ্যে গো-হত্যা নিষিদ্ধ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, ক্ষমতায় এসে নরেন্দ্র মোদি গরু পাচার বন্ধ করে দিয়েছেন। বিসাদা গ্রামের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী এখনো কিন্তু মুখ খোলেননি। ভোটের মুখে লালু প্রসাদ তাই মোদিকে কটাক্ষ করে বলেছেন, উনি অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র।
ইকলাখের পরিবার আপাতত বিসাদা গ্রামে নেই। গোটা তল্লাট পুলিশে সয়লাব। গ্রামবাসীরা চাইছেন না এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি হোক। তাঁরা এ-ও চাইছেন না নিহত ইকলাখের পরিবার গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যাক। স্থানীয় হিন্দুরা ইকলাখের পরিবারকে এ নিয়ে ‘অনুরোধ’ও করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে ইকলাখের বড় পুত্র মুহম্মদ সরতাজ এক বেসরকারি টিভির অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বলেছেন, ‘এমনটা ঘটতে পারে কখনো ভাবিনি। গ্রামের অধিকাংশ মানুষই ভালো। সবাই সব সময় মিলেমিশে থেকেছি। দুচারজন খারাপ হয়তো এই কাজ করেছে। কিন্তু গ্রামবাসীরাই সবাইকে আগলে রাখছে।’ সরতাজ ভারতীয় বিমানবাহিনীর কর্মী। ঘটনার দিন চেন্নাইয়ে ছিলেন। রাজনীতিবিদদের প্রতি তাঁর আবেদন, দয়া করে এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করবেন না। এটা রাজনীতি করার সময় নয়।
মন্তব্য করুন