আলোকিত কক্সবাজার ডেক্স॥
ইতালির নাগরিকের পর এবার দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হলেন জাপানের এক নাগরিক। তাঁর নাম হোসে কোমিও। রংপুর শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মাহীগঞ্জের পাশে আলুটারি গ্রামে আজ শনিবার সকালে হত্যার ঘটনা ঘটে। গ্রামটি কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নে পড়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার ব্যক্তিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে গেছে।
হোসে কোমিওর পাসপোর্টের নম্বর ১২৫৯৫৫২। পাসপোর্ট থেকে জানা যায়, তিনি গত ৮ আগস্ট ভারত থেকে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসেন। তাঁর ভিসার মেয়াদ ছিল আগামী বছরের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত। তিনি রংপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় জাকারিয়া বালা নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
বর্তমানে লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা রয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক এ এস এম বরকতুল্লাহ বলেন, যখন হোসেকে আনা হয় তখন তিনি মৃত ছিলেন। বিশেষ টিম গঠন করে তাঁর লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে।
হাসপাতালে হোসের বাড়িওয়ালা এ কে এম জাকারিয়া বালা এই প্রতিবেদককে জানান, আলুটারি গ্রামে তাঁর একটি প্রকল্প আছে। সেখানে দুই একরের বেশি জমিতে তিনি গরুর জন্য নেপিআর ঘাস আবাদ করতেন। প্রতিদিনের মতো আজ সকালেও তিনি কাজে বের হন। পরে তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি হাসপাতালে ছুটে আসেন।
জাকারিয়ার তথ্যমতে, তিনি নিজেও দীর্ঘদিন জাপানে ছিলেন। তাঁর পরিবারের অনেকে এখনো জাপানে থাকেন। এই সূত্রে হোসে বাংলাদেশে তাঁর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তিনি একাই থাকতেন।
রিকশাচালক মুন্নাফ হোসেনের রিকশায় করে প্রতিদিন হোসে কর্মস্থলে যেতেন। আজও সে রকমই গিয়েছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুন্নাফকে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মাহীগঞ্জ থেকে হারাগাছের দিকে যাওয়ার পথে রোটারি স্কুলের সামনে থেকে পূর্ব দিকে নিচে নেমে যাওয়া কাঁচা রাস্তার ১০০ গজের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। আনুমানিক তখন সকাল ১০টা। এ সময় বিপরীত দিক থেকে মুখে কালো কাপড় বাঁধা অবস্থায় দুই যুবক এসে রিকশার গতিরোধ করে হোসেকে গুলি করে পাকা রাস্তার দিকে ছুটে যায়। পাকা রাস্তার মাথায় আগে থেকেই হেলমেট পরা অবস্থায় এক যুবক মোটরসাইকেল চালু করে বসে ছিল। এই দুই যুবক ওই মোটরসাইকেলে চড়ে হারাগাছের দিকে চলে যায়। তাদের পরনে শার্ট ও জিনসের প্যান্ট ছিল।
মুন্নাফ আরও বলেন, ঘটনাস্থলের ৩০০ গজের মধ্যে চায়ের কয়েকটি স্টল ও ছোট বাজার আছে। গুলির শব্দ ও চিৎকার শুনে বাজারের এবং আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। প্রথমে হোসেকে উদ্ধার করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে মাহীগঞ্জ সাতমাথা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পিকআপ ভ্যানে করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘড়ির কাঁটায় তখন ১১টা ১০ মিনিট।
পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, হোসের বুকে, ডানহাতের কবজি ও ঘাড়ের ডান দিকে গুলি লাগে।
যেখানে হোসেকে গুলি করা হয় তার পাশেই একটি বাড়ি রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেই বাড়ির ছেলে মুরাদ হোসেনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আলুটারি গ্রামের বাসিন্দা শাহ আলমের জমি লিজ নিয়ে কাজ করছিলেন হোসে। শাহ আলম বলেন, খুব হাসিখুশি মানুষ ছিলেন হোসে। সবার সঙ্গে মিশতেন। তাঁর কোনো শত্রু থাকতে পারে না।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রংপুরের দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুস সালাম বেলা আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি পুরোপুরি তদন্ত না করে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে যেখানে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে সে স্থানটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। এখানে আন্তর্জাতিক বিষয় জড়িত। আমরা বিষয়টি উদ্ঘাটনে যত প্রযুক্তি আছে, সবই প্রয়োগ করার চেষ্টা করছি।
পুলিশ এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জাকারিয়া, মুন্নাফ, মুরাদ ও হীরাকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে গেছেন। হোসের আবাদি জমির পাশেই হীরার মাছের ঘের রয়েছে। হীরাকে প্রায়ই হোসের সঙ্গে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। এ দুজনের মধ্যে ব্যবসায়িক কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখবে পুলিশ।
গত সোমবার সন্ধ্যায় গুলশান ২ নম্বরের ৯০ নম্বর সড়কের ফুটপাতে সিজারকে (৫০) গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আইসিসিও কো-অপারেশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রুফ (প্রফিটেবল অপরচুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি) কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা দুই তরুণকে গুলি ছুড়ে মাঝবয়সী এক ব্যক্তির মোটরসাইকেলে করে পালাতে দেখেছেন।
মন্তব্য করুন