তাকে নিয়ে কত শত স্মৃতি গুনবো? বা আওলাদ ভাইকে নিয়ে সুদূর ফ্লোরিডা থেকে এভাবে স্মৃতি গুনতে হবে এটাই বিশ্বাস হচ্ছে না। নিউইয়র্কের টাইম টেলিভিশনে আমাদের রাতের লাইভ অনুষ্ঠানের খবর পেয়ে তিনিই আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি ফোন করে বললেন, ‘ওদের একটু আমার নম্বরটা ধরাইয়া দিও, লাইভে কথা বলবো তোমার গান নিয়ে।’ সেই লাইন আর ঠিকঠাক মতো সংযোগ করা যায়নি। কিন্তু এভাবে তিনি আমাদের সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে চলে যাবেন, সেটা ভাবতেই অবাক লাগছে। গত পরশুও একটি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তার সাথে কথা হলো। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া ফোবানায় আসার কথা ছিল আওলাদ ভাইয়ের। তাই এই অচেনা শহরে এসেই জ্যাকসন হাইটসের বাংলা সংবাদপত্রের কর্মী বড় ভাই থেকে শুরু করে ঢাকা থেকে আগত প্রায় সকল শিল্পীরা জানতে চাইলেন, ‘এবারে তো আওলাদ ভাইয়ের আসার কথা শুনেছিলাম। উনি কবে আসবেন?’ আমি বলেছি, শিগগিরই আসবেন। কিন্তু এভাবে চলে যাবেন কিভাবে বিশ্বাস করি! এদেশে নায়ক রাজ রাজ্জাক থেকে শুরু করে গতকাল যে নবাগত মডেল শোবিজে কাজ করতে এসেছেন সেই তরুণও আওলাদ ভাইকে চেনেন। তাই তিনি ছিলেন তারকাদের তারকা। আমার গ্রন্থনা-উপস্থাপনায় একাধিক টিভি শো থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজেই সিনেমা বিষয়ক তথ্যের জন্য যখন তখন ফোন দিতাম। সাবলীল ব্যবহারে কোনোরকম বিরক্তিবোধ ছাড়াই তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতেন। শেষে মজা করে বলতেন, ‘তাইলে আমার কাজ তো করে দিলাম, এবারে কফি খাওয়াবা কখন সেইটা বলো!’ এ রকম কত শত স্মৃতির গল্প আছে তাকে নিয়ে তার কোনো হিসেব নেই! বিশেষ করে ইত্তেফাক বিনোদন ঈদ সংখ্যায় প্রতি ঈদুল ফিতরের বিশেষ সংখ্যায় আমরা বিনোদন সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ রাখার চেষ্টা করি। গত ঈদ বিনোদন সংখ্যায় চলচ্চিত্র বিষয়ক এক আড্ডার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। আওলাদ ভাই নিজেই ঠিক করলেন যে, এফডিসিতেই হবে চলচ্চিত্র নিয়ে আড্ডা। এফডিসির প্রযোজক সমিতির অফিসে তিনি সব আয়োজন করে আড্ডার ব্যবস্থা করলেন। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে চলচ্চিত্রের প্রযোজক, পরিচালক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণির কর্মীরা তাদের নিত্য কাজের জন্য অফিসে ঢুকছিলেন। আওলাদ ভাইকে দেখেই সালাম দিয়ে খোশগল্প শুরু করে দিলেন। একজন মানুষের কাজের ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা কোন জায়গায় পৌঁছালে সব শ্রেণির মানুষের এ রকম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা পাওয়া যায় তা সেদিন বুঝেছিলাম। পরে সারাবেলা আড্ডা শেষে গোটা এফডিসি চত্ত্বরে আমরা ঘণ্টাখানেক ঘুরলাম, ছবি তুললাম। এফডিসিতে নানা কাজেই যাওয়া হয় কিংবা এর আগে অনেকবার গিয়েছি, কিন্তু আওলাদ ভাইয়ের নেতৃত্বে ওইবারের এফডিসি চত্ত্বরে আড্ডা দেওয়া ও ফটোশুটের স্মৃতিটা স্মরণীয় হয়ে আছে, থাকবে এক জনপ্রিয় বিনোদন সাংবাদিক, একজন তারকাদের তারকার কর্মযজ্ঞের কারণেই। তাই তার এই অকষ্মাত্ মৃত্যুতে আমরা শুধু নই, গোটা শোবিজের সকলে একজন অভিভাবক হারালেন। পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
ওয়েস্ট পাম বীচ, ফ্লোরিডা থেকে
মন্তব্য করুন