শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:২১ অপরাহ্ন

বিট কর্মকর্তার যোগসাজসে ঝাউবাগান দখলের অভিযোগ !

বিট কর্মকর্তার যোগসাজসে ঝাউবাগান দখলের অভিযোগ !

অনলাইন বিজ্ঞাপন

কক্সবাজার সৈকতের নাজিরারটেক-সমিতিপাড়া পয়েন্টের ঝাউবাগান দখল করে বসতি গড়ার হিড়িক পড়েছে। বনবিভাগের দায়িত্বশীলদের ম্যানেজ করে সামুদ্রিক ঝড়-ঝঞ্জা রক্ষাকবচ হিসেবে পরিচিত ঝাউবীথি কেটে ঝুপড়ি ঘর তুলছে দখলদাররা। চলতি মাসের শুরু হতে সমিতিপাড়া-নাজিরারটেক এলাকায় প্রায় তিন একর জমি দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি বসতি। এসব বিষয় প্রকাশ পাবার পর পরিবেশ প্রেমীদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিলেও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সদর রেঞ্জাধীন কস্তুরাঘাট বিট কর্মকর্তা ও সদর রেঞ্জার।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সৈকতের কলাতলি থেকে উত্তরে নাজিরারটেক পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে বালিয়াড়ি রক্ষাকবচ ঝাউবাগান। ডায়াবেটিক হাসপাতাল পয়েন্ট থেকে উত্তর দিকের পুরোনো বাগানগুলোর অধিকাংশ দুর্বৃত্তরা কেটে নিয়েছিল। আর জলোচ্ছাসের ঢেউয়ের তোড়ে তলিয়ে যায় কিছু গাছ। এরপর আবারো চারা লাগিয়ে সৃষ্টি করা হয় ঝাউবাগান। বর্তমানে গাছগুলো প্রায় ৫ থেকে ১০ফুট লম্বা হয়েছে। কিন্তু বনবিভাগের সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতায় ঝাউবাগানের গাছ কেটে জমি দখলে নিয়ে তোলা হচ্ছে ঝুপড়ি ঘর। রুহুল আমিন, আনু বিবি, রহমত, আলি আকবর, জমির উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন পক্ষকাল ধরে ১৫ থেকে ২০ শতক জমি দখলে নিচ্ছে।

সূত্র আরো জানায়, ঝাউবাগান রক্ষায় গঠন করা কমিউিনিটি পেট্রোলিং গ্রুপ (সিপিজি)’র দায়িত্বশীলদের মাধ্যমে কস্তুরাঘাট বিট কর্মকর্তা লুৎফুর রহমানকে প্রতিটি ঘর বাবদ নির্ধারিত টাকা দিয়েই এ দখল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বনবিভাগ গাছ লাগানো ও পরিচর্যার দায়িত্বে থাকলেও মূল জমির মালিক জেলা প্রশাসন। কস্তুরাঘাট বিট কর্মকর্তা লুৎফুর রহমানের চাকরির মেয়াদ আর বছর দেড়েক সময় রয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তা নির্লজ্জ ভাবে সৈকতের বালিয়াড়ি দখলে সহায়তা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দখলদারদের কাছ থেকে নেয়া টাকার ভাগ যাচ্ছে সদর রেঞ্জারের পকেটেও।

দখল বিষয়ে কমিউিনিটি পেট্রোলিং গ্রুপ (সিপিজি)’র সভাপতি মোস্তাক আহমদ বলেন, আগে লাকড়ি হিসেবে ব্যবহারে জন্য অনেকে গাছ কাটলেও এখন প্রতিঘরে গ্যাসের চুলা নিশ্চিত করায় কেউ গাছ কাটেন না। আনু বিবিসহ কয়েকজন ঘর করেছে বলে খবর পেয়েছি। অনেককে চিনি না। আমাকে ম্যানেজ করে দখল বা আমার মাধ্যমে মিয়া সাবকে (বিট অফিসারকে) টাকা দেয়ার কথা সত্য নয়।

দখলের বাধা দেয়া হয়না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তাক বলেন, আমি সিপিজির সভাপতি হতে চাইনি, জোর করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাই আমি তেমন ডিউটি করি না। তবে অনেক সময় অভিযান পরিচালনা করা হয়।

টাকা নিয়ে দখলে সহায়তার অভিযোগ অস্বীকার করে কস্তুরাঘাট বিট কর্মকর্তা লুৎফুর রহমান বলেন, নতুন করে কোন দখল হয়নি। পুরনো দখলকৃত জমিতে নতুন ঘর করলে আমাদের করার কিছু থাকে না।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা বলেন, সৈকত তীরের জমির মালিক জেলা প্রশাসন। কিন্তু যেহেতু বাগানটা আমরাই করি সেহেতু তার দেখভালও আমাদের দায়িত্বে পড়ে। আমাদের তৎপরতার কারণে গত বছর দুয়েক ধরে ঝাউবাগান দখল এক প্রকার বন্ধ হযে যায়। কিন্তু মাস দুয়েক আগে একটি দুর্ঘটনায় আমি মারাত্মক আহত হয়ে বেশ কিছুদিন হাসপাতালে শয্যাশায়ী ছিলাম। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হতে পারিনি। পক্ষকাল আগে ঝাউবাগানের কিছু অংশে দখল ও ঘর উঠার খবর এসেছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে শীগগিরই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু কক্সবাজার সফরে এসে সৈকতের এই ঝাউবাগান সৃজনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ঝাউবাগান আজ পর্যটন শিল্প বিকাশের অন্যতম সহায়ক। তেমনি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে কক্সবাজার শহর রক্ষাও কবচও এটি। তাই এটি রক্ষায় গুরুত্ব দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার তাগাদা দিয়ে আসছেন।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM