শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:০০ পূর্বাহ্ন

‘সৈকতের বালিয়াড়িতে স্থায়ী বাঁধ হলে ঝুঁকিতে পড়বে স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ’

‘সৈকতের বালিয়াড়িতে স্থায়ী বাঁধ হলে ঝুঁকিতে পড়বে স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ’

অনলাইন বিজ্ঞাপন

বিশ্বের দীর্ঘতম অখন্ড সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে একটি বিশাল আকারের বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। এ বাঁধের ফলে দ্বিখন্ডিত হচ্ছে সৈকতের বালিয়াড়ি। এতে রক্ষুসে আচরণ করে ক্রমে ভাঙ্গছে সমুদ্র তীর। এ ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে যে কোন সময় তলিয়ে যেতে পারে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এমনটি মনে করছেন পরিবেশবিদরা।

এ নিয়ে প্রতিবাদ মুখর হয়েছে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন। বাঁধ নির্মাণ বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী বারাবর স্বারকলিপি প্রদান করেছে তারা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সভাপতি ও প্রবীন সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, পক্ষকাল ধরে ইনানী রয়েল টিউলিপ হোটেলের পশ্চিম পাশে সৈকত থেকে বালি নিয়ে জিও ব্যাগ ভর্তি করে একটি বাঁধ নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এটি নজরে আসার পর কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে এ বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে কোন সঠিক তথ্য মেলেনি। অথচ কক্সবাজারসহ দেশের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় কোন স্থাপনা বা বাঁধ নির্মাণ আইনত অবৈধ। ইসিএ এলাকা হওয়ার পরও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ঠ কোন প্রতিষ্ঠান বাঁধ নির্মাণ বন্ধে এগিয়ে আসেনি। তাই আমরা বাধ নির্মাণস্থলে গিয়ে মানববন্ধন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্বারকলিপি প্রদান করা হয়।

বিষয়টি নজরে আসার পর মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হলরুমে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে স্থানীয় সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে: কর্ণেল অব:ফোরকান আহমদ, নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ক্যাপ্টন শাহ আলমসহ, বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনধি, রাজনৈতিক ও পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে নৌবাহিনীর প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন শাহ আলম বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি আন্তর্জাতিক নৌ মহড়া আয়োজনের প্রক্রিয়া চলছে। সেখানে প্রায় ৩৫ টি দেশের নৌ বাহিনীর সদস্যরা অংশ নিবেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতি উক্ত নৌ মহড়া উদ্বোধন করে কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করার কথা রয়েছে। মহড়ায় অংশ নেয়া জাহাজে যেতে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জেটি নির্মাণ অনুমোদন দিয়েছেন দাবি করলেও সংশ্লিষ্ট কোন কর্তৃপক্ষ এখনো লিখিত অনুমতি দেননি বলে নিশ্চিত করেছেন উপস্থিত পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

তবে প্রায় সব দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে বলে বৈঠকে উল্লেখ করেন ক্যাপ্টেন শাহ আলম।

বৈঠকে উপস্থিত পরিবেশবাদি নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা জানতে পেরেছি চট্টগ্রামের একটি কোম্পানি ২০০ কোটি টাকা ইনভেস্টে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ নামাবেন। এর পেছনে সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বর্তমানে কর্মরত অনেকে রয়েছেন। নৌবাহিনীকে সামনে দিয়ে জেটিটি নির্মাণের পর সে কোম্পানি এটি স্থায়ীভাবে ব্যবহার ফন্দি আটছেন। কিন্তু জেলা প্রশাসন বা বিধিবদ্ধ কোন সংস্থা ইসিএ ঘোষিত এলাকায় বাঁধ নির্মাণের অনুমতি দিতে পারে না। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এমন কাজ আইনের প্রতি অবমাননার সামিল। জিও ব্যাগের বালি ভরে বাধ নির্মাণ করতে গিয়ে বাধের উভয় পাশে একপ্রকার পুকুর বানিয়ে ফেলা হয়েছে। আমরা সরকারের বিরোধী নয়, তবে আইন মেনে সৈকতের অখন্ডতা রক্ষা করে জেটি নির্মাণ হউক সেটিই আমাদের দাবি।

বৈঠকে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারি পরিচালক সংযুক্তা দাশ গুপ্তা বলেন, পরিবেশ আইনে ইসিএ এলাকায় কোন অবকাঠামো ও বাঁধ নির্মাণে বাঁধা রয়েছে। প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ইনানী সৈকতে বাধ নির্মাণে কাউকে অনুমোদন দেয়া হয়নি।

কক্সবাজারের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা সৈকতকে দ্বিখন্ডিত করার প্রক্রিয়া বন্ধে কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল’র সহযোগিতা চাইলে তিনি মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) দুপুরের পর ইনানী রয়েল টিউলিপ হোটেল এলাকায় নির্মিতব্য বাধ পরিদর্শণে যান।

সেখানে গণমাধ্যমকে সাংসদ কমল বলেন, যেহেতু কক্সবাজার একটি ইসিএ এলাকা সেহেতু সৈকতে বালির রাস্তা তৈরি হলে সমুদ্র রাক্ষুসে রূপ ধারণ করতে পারে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ সড়কটিও। মেরিন ড্রাইভ রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক নৌ-মহড়া সম্পন্ন করতে উখিয়া এবং রামুর সংযোগস্থল সোনারপাড়া রেজুখাল মোহনাটি ব্যবহার করা যেতে পারে। ইতিপূর্বেও উক্ত মোহনায় বড় জাহাজ নোঙ্গর করার সক্ষমতা প্রমাণ হয়েছে। এটি একটু ড্রেজিং করা হলে সেখানে একটি স্থায়ী নৌ-ঘাটি ও জেটি নির্মাণ করা যেতে পারে। যা ব্যবহার করে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজগুলো যাত্রী নিয়ে এখান থেকে চলাচল করতে পারবে। আমি বিষয়টি বিবেচনায় নিতে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবো।

কউক চেয়ারম্যান লে:কর্ণেল অব: ফোরকান আহমদ বলেন, রাষ্ট্রীয় আয়োজন রাষ্ট্রীয় সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি নিয়ে করা বাঞ্ছনীয়। অনুমতিহীন যেকোন কাজই আইন পরিপন্থি।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM