মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:০৪ পূর্বাহ্ন
এম আবুহেনা সাগর, ঈদগড় থেকে ফিরে
ঘরবাড়ী পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজে পাহাড়ে জন্মানো ঝাড়ু ফুলের বিকল্প নেই। গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে প্রতিটি ঘরেই রয়েছে এর কদর।
বাইশারী আর ঈদগড়ের বিভিন্ন এলাকার পাহাড়ের ঢালে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ঝাড়ু ফুল স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে এখন যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
ঝাড়ু ফুল সংগ্রহ ও বিক্রি করে বাড়তি উপার্জন করছেন স্থানীয়দের অনেকে। এ নিয়ে ভাগ্যের বদল হয়েছে বহুজনের। বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় স্থানীয় মানুষ প্রাকৃতিকভাবে পাহাড়ে জন্মানো ঝাড়ু ফুলের জন্য অপেক্ষা করেন।
জানুয়ারী থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পাহাড়ের পতিত জমি থেকে নারী-পুরুষ এসব ঝাড়ু ফুল সংগ্রহ করে থাকেন। কাঁচা অবস্থায় এই ঝাড়ু ফুলের ৫-৬ ফুট দৈর্ঘ্যের শলাকা কেটে এক জায়গায় জড়ো করা হয়। সপ্তাহ খানেক শুকানোর পর ১৮-২২টি শলাকা বেঁধে বানানো হয় ছোট ছোট আঁটি। আবার ছোট ছোট এ ধরণের ৫০-৬০টি আঁটি দিয়ে বাঁধা হয় এক একটি বোঁঝা। এরপর ঐসব বোঝা বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয় স্থানীয় বাজারে পাইকারদের কাছে। আর পাইকারদের কাছে এসব ছোট আঁটি বিক্রি হয় ২০-২৫ টাকায় আর বড় বোঝা ৫’শ থেকে ৬’শ টাকায়।
১৫ ফ্রেরুয়ারী বিকেলে কক্সবাজার প্রতিদিনের ষ্টাফ রিপোটার পাহাড়ী ইউনিয়ন ঈদগড়ে গেলে পুলিশ ক্যাম্পসহ নানাস্থানে ঝাড়ু ফুল শুকানোর দৃশ্য চোখে পড়ে। বিক্রেতারা ঝাড়ু ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেন এখানে। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারী ও খুচরা ক্রেতারা এ হাট থেকেই সংগ্রহ করেন ঝাড়ু ফুল।
ঈদগড়ের গয়ালমারা এলাকার এক যুবক এই প্রতিবেদককে জানান, প্রতি শুক্র ও সোমবার ঈদগড় বাজারে পাহাড় থেকে ঝাডুফুল কেটে বিক্রি করতে আনে। পূর্বে অনেক পাইকারী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দাদন হিসেবে টাকাও নিয়েছিল। সেটি ঝাড়ুফুল দিয়ে শোধ করে যাচ্ছে। জুমের পতিত অংশে ঝিরি ছরার পাশে জন্মানো এই ফুল আমাদের বাড়তি উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম। পাহাড়কে জুমের জন্য প্রস্তুত করার পূর্বে এ ঝাড়ু ফুল বিক্রি করে বাড়তি উপার্জন করি।
ঝাড়ু ফুলের মৌসুমী ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা ঈদগড় ও বাইশারী বাজার থেকে পাইকারী দামে কিনে ঝাড়ু ফুল সরবরাহ করে চট্রগ্রাম বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
এলাকার কজন জানান,বছরের এই সময় ঝাড়ু ফুল সংগ্রহ করে ব্যবসায়ীরা ট্রাকযোগে দুর দুরান্তের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে নিয়ে যায়।
আবদু জব্বার নামের এক ব্যবসায়ী জানান, বাজারে ঝাড়ু ফুল একটি দশ টাকা হারে বিক্রি করে। পাশাপাশি জেলা সদর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে স্থানীয় খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকেও পাইকাররা ভিন্ন ভিন্ন দামে সংগ্রহ করে থাকেন গৃহস্থালি কাজের অন্যতম প্রয়োজনীয় এ ঝাড়ু ফুল।
এদিকে নির্বিচারে পাহাড়ী বনজ সম্পদ নিধনের ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এ ফুল। পাহাড়ের অর্থনীতিতে গুরুত্ব পূর্ণ অবদান রেখে চলছে এ ঝাড়ু ফুল।
সংরক্ষণ করা গেলে পাহাড়ের অর্থনীতিতে এই পণ্যটি বিশেষ অবদান রাখতে পারবে। শীঘ্রই এ পণ্যটি কৃষি পণ্য হিসেবে স্থান পাবে বলে প্রত্যাশা কৃষকের।
মন্তব্য করুন