বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১৪ অপরাহ্ন

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে উদ্ভোধন হলো পয়:বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে উদ্ভোধন হলো পয়:বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট

অনলাইন বিজ্ঞাপন

ওয়াহিদ রুবেল :

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশন প্লান্ট চালু হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ লোকের পয়:বর্জ্য নিষ্কাশন হবে এ প্লান্টে। মঙ্গলবার ২৯ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে বারোটায় কুতুপালং ক্যাম্প-৪ এ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোহাম্মদ এনামুর রহমান এমপি এ প্লান্টের উদ্ভোধন করেন।

আন্তর্জাতিক শরণার্থী সাহায্য সংস্থা অক্সফাম এবং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর যৌথভাবে এ পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট বাস্তবায়ন করেছেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ত্রান ও দুর্যোগ মন্ত্রনালয়ের সচিব মো: শাহ কামাল, শরণার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা মো: আবুল কালাম, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জমান, উখিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের, ইউএনএইচসিআরের কক্সবাজারের প্রধান Marin Din Kajdomcaj.

উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা প্রায় সাড়ে এগারো লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশাল এ জনগোষ্টিকে আশ্রয় দিয়ে স্বীকৃতি পেয়েছেন মাদার অব হিউমিনিটির। কিন্তু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গারা উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে থাকবে। এ অবস্থায় স্থানীয় পরিবেশ রক্ষায় পরিকল্পিতভাবে পয়:বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা করা জরুরী। বিষয়টি উপলব্দি করে অক্সফাম এবং ইউএনএইচসিআর সরকারের কাছে জমি চাইলে সরকার এ জমি বরাদ্ধ দেয়। আমি বিশ্বাস করি স্বল্প খরচে বিশাল এ প্রকল্পটি পরিবেশ রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ প্রকল্প যদি চলমান থাকে তবে বাংলাদেশের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরি করা যাবে। ভবিষ্যতে সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রকল্প ব্যবহার এবং পরিচালনার জন্য কমিউনিটি সদস্যদের প্রশিক্ষণও দেয়া হবে।

মন্ত্রী বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সাহায্য সংস্থা এবং রোহিঙ্গাদের মতামতের উপর নির্ভর করছে। আমরা চেষ্টা করছি সবার সাথে সমন্বয় করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করতে।

উখিয়া থেকে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসান চরে স্থানান্তর করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে উক্ত স্থানে এক লাখ রোহিঙ্গাদের জন্য শেডও নির্মাণ করা হয়েছে। তবে কবে নাগাদ তাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরো বলেন, ভারত থেকে যেসব রোহিঙ্গা আসছে তা নিয়ে ভারতের সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা হয়েছে। এ সমস্যা দ্রæত সমধান হবে বলে বিশ্বাস করি। তবে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার সাড়ে এগারো লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। সেখানে ভারত থেকে আসা কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া কোন জটিল সমস্যা হবে না।

শরণার্থী ত্রান ও পুন:বাসন কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, এ পর্যন্ত ষোলশত রোহিঙ্গা ভারত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। তাদের মধ্যে ৬/৭ শত রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। অন্যন্যদের প্রাথমিক আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।

অক্সফাম ওয়াটার ও স্যানিটেশন প্রকৌশলী সালা উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্বের শরণার্থী শিবিরগুলোতে মানুষের পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি চ্যালেঞ্জ। পরিবেশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ রেখে কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে এ প্লান্ট বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রতিদিন দেড় লাখ মানুষের গড়ে চল্লিশ কিউবিক মিটার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বিশ বছর স্থায়ী এ প্লান্টটির বায়োগ্যাস স্থানীয়রাও উপকৃত হবেন।

এ প্রকৌশলী বলেন, বিশ্বের প্রায় সব ক্যাম্পে অপর্যাপ্ত নিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে অতিরিক্ত বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না। কিন্তু এ ধরনের পরিশোধন ব্যবস্থা ক্যাম্পের মধ্যেই তৈরি করা গেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ অন্যন্য অনেক ঝুঁকি কমে আসবে। পরিবেশ বান্ধব এই প্লান্টটি তৈরি করা হয়েছে আবৃত পুকুর এবং জলাভূমি দিয়ে। যা মানুষ ও পরিবেশের জন্য নিরাপদ। রয়েছে একাধিক পরিশোধন ধাপ। এতে স্থানীয় পানির উৎস দুষিত করবে না। এছাড়া আবৃত থাকার কারণে দুর্গন্ধ বের হবে না।

তিনি আরো বলেন, কুতুপালং ক্যাম্প-৪ এ স্থাপিত পয়:বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় তৈরি করা হয়েছে দুটি ল্যাগুন। এ দুটি ল্যাগুন পূর্ণ হতে সময় লাগবে ৬-৭ মাস।

অক্সফামের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর দিপঙ্কর দত্ত বলেন, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বর্জ্য এক ধরনের দুর্যোগ। স্থানীয় পরিবেশ রক্ষা করতে বাংলাদেশ সরকারের দেয়া প্রায় আড়াই হাজার একর জমিতে এ প্লান্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। প্রাথমিক পর্যায়ে অক্সফামের অধিনে থাকা চারটি ক্যাম্পের বর্জ্য নিষ্কাশন করা হবে। তবে চারটি পয়:বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা প্লান্ট করা হলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ পুরো কক্সবাজারের বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM