বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন

ড. কামাল সমাচার

ড. কামাল সমাচার

অনলাইন বিজ্ঞাপন

ডেক্স নিউজ:

রাজনীতিতে ডিগবাজিকে তিনি নিয়ে গিয়েছেন শিল্পের পর্যায়ে। স্বার্থ হাসিলে কিংবা গা বাঁচাতে অসংখ্যবার ডিগবাজি দিয়েছেন,ভালো মানুষের ভান ধরে অবতীর্ণ হয়েছেন নির্বাচনী লড়াইয়েও।

কিন্তু বিধি বাম! দেশের জনগণ তাকে কখনোই ভোট দেয় না।

১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে কামাল হোসেন ভোট পান সবে ২৬ শতাংশ।
১৯৯১ সালে ঢাকার মিরপুর আসনে কামাল হোসেনকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু বিএনপির প্রার্থীর কাছে বড় ব্যবধানে হেরে যান। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ থেকে ছিটকে পড়েন। ১৯৯২ সালে নিজেই রাজনৈতিক দল গণফোরাম গঠন করেন।
নির্বাচনের প্রতীক হয় উদীয়মান সূর্য। এই প্রতীক নিয়ে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে অংশ নেয় গণফোরাম। ১০৪টি আসনে (৭ম সর্বোচ্চ) প্রার্থী দেয় দলটি। প্রতিটি আসনেই ভরাডুবি হয়, জামানতের টাকা ফেরত পাননি কামাল হোসেনসহ কেউ।
গণফোরামের প্রার্থীরা বরিশাল বিভাগে মোট ভোট পেয়েছিল এক হাজার ৮২৯টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ভোট পেয়েছিল আট হাজার ৬৪০টি, ঢাকা বিভাগে ভোট পেয়েছিল ২২ হাজার ৬২৩টি, খুলনা বিভাগে ভোট পেয়েছিল এক হাজার ৫৬৫টি, রাজশাহী বিভাগে ভোট পেয়েছিল ১২ হাজার ১৭টি এবং সিলেট বিভাগে ভোট পায় সাত হাজার ৫৭৬টি।
সর্বমোট ভোট পড়েছিল ৫৪ হাজার ২৫০টি। মোট ভোটারের বিপরীতে দশমিক শূন্য নয় পাঁচ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়েছিল কামাল হোসেনের দল।
২০০১ সালের নির্বাচনে ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর আসন থেকে ছয় হাজার ১৮৭ ভোট পেয়ে জামানত হারানোর পর জনতার মন জয়ের লড়াইয়ে ক্ষ্যান্ত দেন ড. কামাল।

তাই রাজনীতি সচেতন অনেকেই বলে থাকেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন ইউপি সদস্য হবার যোগ্যতাও রাখেন না রাজনীতিতে ‘অচল মাল’ খ্যাত এই লোক।

যদিও ইদানীং তিনি স্বপ্ন দেখছেন দেশদ্রোহী বিএনপি-জামায়াত রাজাকারগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসবেন, চালাবেন দেশ। কিন্তু যাকে চালাতেই ২ দিক দিয়ে ২ জনের ধরে ওঠাতে হয়, তিনি কেমন করে দেশ চালাবেন, এ প্রশ্ন এখন সকলের মুখে মুখে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আশীর্বাদে রাজনীতিতে উত্থান তার। কিন্তু বর্তমানে তার সকল কর্মকাণ্ড খুনী বিএনপি-জামায়াতের লোকদের সাথে।
অবশ্য এবারই প্রথম নয়, কামাল হোসেনের আদর্শ পরিবর্তনের ইতিহাস বাংলাদেশের বয়সের সমান।

ড. কামাল হোসেন যে কার ইশারায় নড়েন আর কেন বারবার ডিগবাজি খান তা রাজনৈতিক মহলের মুখরোচক আলোচনার বিষয়। আসুন জেনে নিই সুযোগসন্ধানী রাজনীতিবিদের ডিগবাজির ইতিহাস।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কথা হয়েছিল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ড. কামাল হোসেন একসঙ্গে ভারতে যাবেন। ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলামও ড. কামালকে বিষয়টি অবহিত করেছিলেন। ড. কামাল গাড়ি থেকে নেমে আত্মীয়ের বাসায় গেলেন। এর পরদিন থেকে তিনি লাপাত্তা। একপর্যায়ে লন্ডনে শ্বশুড়বাড়ি চলে গেলেন ড. কামাল।
অথচ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মহানুভব বঙ্গবন্ধু যখন দেশে ফিরলেন, ড. কামালকে সঙ্গে নিয়েই ফিরলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু প্রথমে ড. কামালকে আইন মন্ত্রণালয় এবং পরবর্তীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে না থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ছিল ড. কামালের প্রথম ডিগবাজি।

চলুন,এবার জেনে নিই তার দ্বিতীয় ডিগবাজির কথকতা।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের আগে কামাল হোসেন হঠাৎ করেই বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। কোন অফিসিয়াল ট্যুর কিংবা রাষ্ট্রীয় কাজে নয়, কামাল বিদেশে গিয়েছিলেন ব্যক্তিগত ট্যুরে। তার দেশত্যাগে যে কারো মনে প্রশ্ন উঠবে, তাহলে কি ড. কামাল আগে থেকেই জানতেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মতো একটি কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে? বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ড. কামালের কর্মকাণ্ডে এই সন্দেহ আরো দৃঢ় হয়।

স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী এক প্রকার জোর করেই তাকে বঙ্গবন্ধুর বেঁচে যাওয়া দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে আসেন। তখন শেখ রেহানা তাকে এই বিষয়ে অন্তত একটি বিবৃতি দিতে অনুরোধ করেন। শেখ রেহানা বলেন, যেহেতু ড. কামাল একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা ছিল আর বঙ্গবন্ধুই তাকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন, তাই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করে ড. কামাল হোসেনেরই বিবৃতি দেয়া উচিত। কিন্তু সেই সময়টাতে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে কোন বিবৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানান ড. কামাল।

পরবর্তী ডিগবাজিটি কামাল নেন ১৯৮৫ সালে। এবছরে সরকার হরিপুর গ্যাসক্ষেত্র অক্সিডেন্টাল নামে এক বহুজাতিক কোম্পানিকে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সারা দেশ উত্তাল হয়ে উঠে। দেশি গ্যাসক্ষেত্র বিদেশিদের হাতে ইজারা দেয়ার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোট আন্দোলন শুরু করে। ড. কামাল হোসেনও বিভিন্ন সভা সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে জানা গেল যে কোম্পানিটিকে গ্যাসক্ষেত্রের ইজারা দেয়া হয়েছে, সেই কোম্পানির লিগাল অ্যাডভাইজর হলেন ড. কামাল হোসেন।

এরপরের ডিগবাজিটি ১৯৯১সালের।আওয়ামী লীগের জন্য এবছর নির্বাচনের স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেছিলেন ড. কামাল হোসেন। কিন্তু ওই নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে হারিয়ে দেয়া হয় আওয়ামী লীগকে। ফলে কামাল আবারও খোলস বদলে ফেললেন।

আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে এসে তৈরি করলেন নতুন রাজনৈতিক দল গণফোরাম। ড. কামাল হোসেন গণফোরাম থেকে এই পর্যন্ত তিনটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন আর তিনটি নির্বাচনেই তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এই নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়ে তিনি সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন ১৬২৭টি। তাই এই ডিগবাজিটি যে ড. কামালের জন্য সুখকর হয়নি এই পরিসংখ্যান থেকেই তা বোঝা যাচ্ছে।

এরপরের ডিগবাজিটিতেও কামাল হোসেন নিজের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। কারচুপির নির্বাচন জিতে ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি-জামায়াত জোট রাষ্ট্রক্ষমতায় আসলো। সরকার গঠন করতে না করতেই দেশজুড়ে তাণ্ডব শুরু করলো বিএনপি জামায়াত জোট। তারা নির্যাতন শুরু করলো সংখ্যালঘুদের। বিএনপি জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা পেল না মন্দির, গির্জা এমনকি মসজিদও। এই তান্ডব, এই মানবতার বিরদ্ধে অপরাধের বিরুদ্ধে ড. কামাল হোসেন কিন্তু ‘টু’ শব্দ করলেন না। বিএনপি জামায়াতের অত্যাচারে মানুষের দুর্ভোগ, হাহাকার, আর্তনাদ সীমা ছাড়িয়ে গেলেও ড. কামাল রইলেন ধ্যানীর মতো নিশ্চুপ। এছাড়া ২০০২ সালে অপারেশন ক্লিন হার্ট নামে যৌথ বাহিনীর এক অভিযান শুরু হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে আসলে ওই অভিযান ছিল নির্বিচারে মানুষ হত্যার লাইসেন্স। পরবর্তীতে এই হত্যাকাণ্ডের বৈধতা নিয়ে ইনডেমনিটি আদেশও জারি করা হয়। ড. কামাল নিজেকে সংবিধান প্রণেতা হিসেবে পরিচয় দেন, কথায় কথায় মানবতার বুলি আওড়ান। কিন্তু অপারেশন ক্লিন হার্টের মতো মানবতাবিরোধী অভিযানের ব্যাপারেও ড. কামাল হোসেন ছিলেন নীরব।

চলুন চোখ বুলিয়ে নিই পরবর্তী ডিগবাজি থেকে।
২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭২’এর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। ৭২’এর সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ড. কামাল হোসেন। ‘বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের উপর ন্যস্ত থাকবে’ সেকথা ৭২’এর সংবিধানেই বলা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে যখন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ৭২’এর সংবিধানে ফিরে গেল এবং বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হলো তখন তিনি এর বিরোধীতা করলেন।
এমনকি ২০১৬ সালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে বাতিলও করা হলো ষোড়শ সংশোধনী। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ড. কামালের মতো এমন দ্বৈত চরিত্রের অধিকারী সম্ভবত আর কেউ নেই। নিজেকে ৭২’এর সংবিধান প্রণেতা হিসেবে দাবি করা আবার সেই সংবিধানেরই বিরোধিতা করা একমাত্র ড. কামালের পক্ষেই সম্ভব।

আপাতত সর্বশেষ ডিগবাজিটি সাপ্রতিককালের। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশীয় রাজনীতিতে জোট-ঐক্য প্রভৃতি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার কথা বেশ আলোচিত হচ্ছে। এসব জোট গঠনকে কেন্দ্র করে ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, জামায়াত থাকলে কোন জোট করবেন না তিনি। কিন্তু ড. কামাল আবার ডিগবাজি খেলেন। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যারা বারবার ডিগবাজি দেয় কিংবা নিজেদের স্বার্থের খাতিরে যেসব রাজনীতিবিদ সংবিধানের ব্যাখ্যা পরিবর্তন করে, দল পরিবর্তন করে প্রকৃতপক্ষে তাদের আদর্শ বলে কিছু নেই। এসকল ডিগবাজিপ্রেমী রাজনীতিবিদদের ওপর জনগণ কতটুকু আস্থা রাখতে পারেন,সে প্রশ্ন থেকেই যায়। সূত্র-বাংলা আমার


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM