শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:২০ পূর্বাহ্ন

মানবপাচারের বিষয়ে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ

মানবপাচারের বিষয়ে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ

অনলাইন বিজ্ঞাপন

ডেস্ক নিউজ:

ইউএসএআইডি’র উপ-প্রধান বনি গ্লিক বলেছেন, মানবপাচারের বিষয়ে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এক দিকে সীমান্ত, অপরদিকে রোহিঙ্গা আধিক্যের কারণে কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়া সীমান্তে এ ঝুঁকি আরও প্রখর। মানবপাচারের বিশ্ব রেঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চলমান অবস্থান দ্বিতীয় সারিতে। এর ক্রমানতি ঘটলে মার্কিন সরকারের সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই মানবপাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর হয়ে কাজ করা উচিত।

কক্সবাজারে মানবপাচার প্রতিরোধে কাজ করা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন তিনি।

উপ-প্রধান বনি গ্লিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মানবপাচার প্রতিরোধে সচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে এনজিও-আইএনজিওর সমন্বয়ে নানা প্রকল্প চলমান রেখেছে। এসব প্রকল্পে তৃণমূল ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ চলছে। ইমাম, শিক্ষক, সমাজপতি, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষার্থীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এ প্রকল্পের আওতায় এনে মানবপাচার প্রতিরোধে শক্ত ভীত গড়ার প্রচেষ্টা চলছে।

USA-USAID-Team

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। সারাবিশ্ব এ সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এটি মূলত মিয়ানমারের কারণেই হয়েছে। বাংলাদেশ ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে সারাবিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

এসময় তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার সরকার। এ সংকট সমাধানে মার্কিন সরকার মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে। ট্রাম্প সরকার ইতোমধ্যে মিয়ানমার সরকারের উপর অর্থনৈতিক নানা বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে, চার সামরিক কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরের দিকে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস টেকনাফের শাপলাপুর রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প এলাকা পরিদর্শনে যান। দুপুরের পর ইউএসএআইডি টিম কক্সবাজার সদরের পাওয়ার হাউস এলাকায় বেসরকারি সংস্থা ইপসা পরিচালিত মানবপাচারের শিকার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার ও রামুর ফতেখারকুলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে চলমান স্যানিটেশন বিষয়ক সচেতনতা কার্যক্রম পরিদর্শন ও মতবিনিময় করেন।

এসময় মানব পাচারের শিকার হয়ে উদ্ধার ভিকটিমদের কঠিন অভিজ্ঞতার কথা শুনেন এবং স্কুল শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় নাটিকা উপভোগ করেন পরিদর্শক টিম। ২০১৭ সালের আগস্টের পর বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তায় বাংলাদেশের পাশে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

ক্যাম্প ও প্রকল্প স্থল পরিদর্শন শেষে তারা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা (আরআরআরসি) মো. মাহবুব আলম তালুকদারের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। এসময় বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার, ইউএনসিআর’র বাংলাদেশ প্রধান স্টিভ তাদের সঙ্গে ছিলেন।

আরআরআরসি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা এখানকার ক্যাম্প এলাকা এবং মিয়ানমারের রাখাইন এস্টেটের পরিস্থিতি দেখে এসেছি। মিয়ানমার এখনও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া অনিরাপাদ। মার্কিন সরকারের প্রত্যাশা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সম্মানজনক ও স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসন। এ ব্যাপারে আন্তজার্তিক সম্প্রদায়কে নিয়ে মার্কিন সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে।

তিনি আরও বলেন, থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ইন্দো-ফ্যাসিফিক সন্মেলনে এ বিষয়টির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন তরান্বিত করতে সকল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারণে এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়ে ইউএসএইড’র উপ-প্রধান বনি গ্লিক বলেছেন, ভাসানচর নিরাপদ বসবাসের উপযোগী কিনা এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও সঠিক পর্যবেক্ষণ পায়নি। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে রোহিঙ্গাদের পাঠাতে আমরা সম্মতি দিতে পারি না। নিরাপত্তার সব দিকের বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে একিভূত সিদ্ধান্তে আসতে পারলে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা সম্ভব হবে।

USA-USAID-Team

বৃহস্পতিবার সকালে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস, ইউএসএইড’র উপ-প্রধান বনি গ্লিক, মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলাররা বিমানবন্দরে পৌঁছালে কক্সবাজারের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা তাদের স্বাগত জানান।

পরিদর্শক টিম কক্সবাজারে জেলা প্রশাসন, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। সেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সাহায্য, ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠী, ভাসানচরে শরণার্থী স্থানান্তরসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তারা।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে ১৯৯২ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আশ্রয় নিয়েছে আরও প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে অবস্থান করছে। জীবন ধারণের সব উপকরণসহ মানবিক সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করাতে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের বন্ধুপ্রতীম নানা দেশকে সঙ্গে নিয়ে সফল প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রচেষ্টা চলছে। এটি সময়সাপেক্ষ হওয়ায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মধ্য থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করার উদ্যোগ চলছে। সেখানে আবাসনসহ নানা সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা হয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার জানানো হচ্ছে। কিন্তু রোহিঙ্গারা প্ররোচণায় পড়ে ভাসানচরে যেতে অনিহা প্রকাশ করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস, রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার ও ইউএস এইডের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও দাবি করেছে সূত্র। সায়ীদ/রুবেল


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM