শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন

দুটি পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ নিয়ে এমপিও ভূক্ত হলেন শিক্ষিকা সীমা বড়ুয়া

দুটি পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ নিয়ে এমপিও ভূক্ত হলেন শিক্ষিকা সীমা বড়ুয়া

অনলাইন বিজ্ঞাপন

ওয়াহিদ রুবেল, কক্সবাজার: ১২ নভেম্বর ১৯

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের বিধি মতে, বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে হলে দুটি পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণী গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডি ইউনিয়নের সাগর মনি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সীমা বড়ুয়া এইচএসসি এবং ডিগ্রীয় তৃতীয় শ্রেণী পাশ করে এমপিও ভুক্ত হয়েছেন। শিক্ষা বোর্ডের নীতিমালার বাইরে তিনি কিভাবে এমপিও ভূক্ত হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম দুই লাখ টাকা নিয়ে জাল সনদ তৈরি করে সীমাকে এমপিও ভুক্ত হতে সহায়তা করেছেন। সীমা বড়ুয়ার এমপিও ভূক্তির বিষয়টি জানা জানি হলে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য হাজী নুরুল ইসলাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের মহা-পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান, পরিদর্শক, জেলা শিক্ষা অফিসার এবং দুর্নীতি দমন কমিশন চেয়ারম্যান বরাবরে এ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে তিনি বলেন, সীমা বড়ুয়ার ( ইনডেক্স নং-১১১৯৩৭০, ইনস্টিটিউশন আইডি-০৩০২১৩১২০২) শিক্ষাগত যোগ্যতার দুটিতে তৃতীয় শ্রেণী পাশ রয়েছে। যা একজন শিক্ষকের এমপিও ভুক্তি হতে প্রধান বাধা। নীতিমালা মতে শুধু মাত্র একটি পরিক্ষায় তৃতীয় শ্রেণী গ্রহণযোগ্য। অথচ দুটি পরিক্ষায় তৃতীয় শ্রেণী পেয়ে তিনি ২০১৫ সালে এমপিও ভূক্ত হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম মাউশি’র কর্মকর্তাদের ঘুষের কথা বলে সীমার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ অবস্থায় বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে এ অভিযোগ দিয়েছেন, এমনটাই দাবি করেছেন অভিযোগকারী হাজী নুরুল ইসলামের।

তিনি বলেন, তথ্য গোপন রেখে প্রধান শিক্ষক সীমা বড়ুয়াকে নিয়োগ দেয়। বিষয়টি আমাদের নজরে আসলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এ আবেদন করেছি।

তবে, প্রধান শিক্ষকের ঘুষ নেয়ার অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষিকা সীমা বড়ুয়া।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামের সাথে অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষক হিসেবে সাগরমণি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। যোগদানের এক বছরের মাথায় ২০১৫ সালে এমপিও ভূক্ত হয়ে যান সীমা বড়ুয়া। দ্রুত সময়ের মধ্যে এমপিও ভূক্ত হওয়াকে রহস্য বলে মনে করেন বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক। একই সাথে দুটি পরিক্ষায় তৃতীয় শ্রেণী থাকার পরও কিভাবে এমপিও ভূক্ত হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছেন, সীমা বড়ুয়া কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে ১৯৯২ সালে এইচ.এস.সি এবং ১৯৯৪ সালে তৃতীয় বিভাগ নিয়ে ডিগ্রী পাশ করেন। কক্সবাজার সরকারি কলেজ সূত্রে তার পরিক্ষার ফলাফল নিশ্চিত হয়েছেন প্রতিবেদক।

সনদের বিষয়ে শিক্ষিকা সীমা বড়ুয়ার সাথে যোগাযোগ হলে তিনি অভিযোগ পুরোপরি সত্য নয় দাবি করে বলেন, আমি এইচ.এস.সিতে তৃতীয় বিভাগ পেয়েছি। এস.এস.সি ও ডিগ্রীতে দ্বিতীয় বিভাগ রয়েছে।

কক্সবাজার সরকারি কলেজের তথ্য সূত্র ধরে ডিগ্রী পরিক্ষার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ডিগ্রী পরিক্ষায় তৃতীয় শ্রেণী পাশের বিষয়টি স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, ডিগ্রী পরীক্ষার ফলাফলের পর আমি পালি (ধর্মীয় শিক্ষার উপর ডিপ্লোমা) করে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি। এখানে কোন বিধি লঙ্গন হয়নি। আমাকে বিধি মতে এমপিও ভূক্ত করা হয়েছে।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, বোর্ডে সঠিক জায়গায় তদবির করা গেলে যে কারো এমপিও দ্রুত হবে। সীমার বেলায়ও তাই হয়েছে।

শিক্ষিকা সীমার বিষয়টি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় দাবি করে তিনি বলেন, মূলত সাবেক সভাপতি ও আমার মাঝে একটি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিলো। এখন বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে। তারপরও যদি কেউ অভিযোগ দেয় তবে আমার করার কিছু নেই।

জানতে চাইলে জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, এ ধরনের কোন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। যদি এটি হয়ে থাকে তবে তার এমপিও ভুক্তি বাতিল করা হবে। একই সাথে এমপিও ভূক্ত হতে যারা তাকে সহযোগিতার করেছেন সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM