মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১১ অপরাহ্ন

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে সেবা বঞ্চিত রোগী !

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে সেবা বঞ্চিত রোগী !

অনলাইন বিজ্ঞাপন

কক্সবাজার, ৬ এপ্রিল ১৯
বৃহস্পতিবার (৪এপ্রিল) কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে এক রোগীকে ইনজেকশন পুশের পরই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনদের মাঝে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরপরই চিকিৎসা ধর্মঘটের ডাক দেয় ইন্টার্ণ চিকিৎসকরা। তাদের সাথে একমত হয়ে হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক- নার্স ও অন্যরা হাসপাতালে আগত রোগীদের সেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আসা জেলার হতদরিদ্র রোগীরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে প্রাণ রক্ষায় বাধ্য হয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা।
কিন্তু হাসপাতালের সকল বিভাগ চালু থাকার কথা জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ৪ এপ্রিল এ অপ্রীতিকর ঘটনাটি পৌর মেয়র ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যস্থতায় তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলেও সেবা দিচ্ছেনা চিকিৎসকরা। তারা ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার বিএমএ কক্সবাজার জেলা শাখার মানববন্ধন আয়োজন হচ্ছে জেনে ইন্টার্ণ চিকিৎসকরা সব ধরণের সেবা গুঠিয়ে রেখেছেন।
সরজমিনে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরী বিভাগ খোলা রয়েছে। তবে সেখানো কোন রোগীকে সেবা দেয়া হচ্ছে না। সেবা নিতে আসা সব ধরনের রোগীদের রেফার করে দেয়া হচ্ছে। এমনকি আন্দোলনের কথা বলে বলা হচ্ছে অন্য কোথাও সেবা নিতে। এ অবস্থায় অসহায় সেবা প্রার্থীরা প্রাইভেট হাসপাতালের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
উখিয়ার মনখালী এলাকার পক্ষাঘাত আক্রান্ত বৃদ্ধার ছেলে সৈয়দুল্লাহ (৪৩) বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় মা হঠাৎ স্ট্রোক করলে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আনা হয়। জরুরি বিভাগে তাকে দেখে ভর্তি না করিয়ে বাইরে কোথাও ভর্তি করানোর কথা বলে ছেড়ে দেয়া হয়।
হামলায় গুরুতর জখম হওয়া মা-বাবাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করাতে সক্ষম হলেও পরবর্তীতে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে তার পিতা-মাতাকে নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন উখিয়ার আবদুল্লাহ নামের এক যুবক। তিনি বলেন, ইনজেকশন পুশিংয়ের পর পরই মারা যাওয়া রোগীর স্বজনদের শান্তনা মূলক কোন কথা বিএমএ নেতারা বলেননি। নিজেদের ভূল থাকলেও তা স্বীকার করার সৎসাহস থাকা দরকার। এতে সমস্যা সমাধান হয় তড়িৎ।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. বিধান পাল বলেন, হাসপাতালে এমনিতেই ডাক্তার-নার্স ঘাটতি রয়েছে। তার উপর এ ধরণের নেক্কারজনক ঘটনা আমাদের গতি থামিয়ে দেয়। এরপরও সব বিভাগে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা চালু রাখা হয়েছে। ডাক্তার-নার্সদের সাধারণ ছুটি পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বৃহস্পতিবারের ঘটনায় জড়িতদের নাম উল্লেখ করে সদর মডেল থানায় এজাহার জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত মামলা রুজু হয়নি। আমরা আশা করবো প্রশাসন যেন এব্যাপারে আন্তরিক হয়।
হাসপাতাল খোলা থাকার পরও সেবা না দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সুষ্ট সমধান না হওয়াকে দায়ি করেছেন। তবে ঐদিন ইনজেকশন পুশের পর পর রোগী মারা যাবার বিষয়টির ব্যাপারে কোন সন্তুষজনক বক্তব্য দিতে পারেননি তিনি।
এদিকে শনিবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেইটের সামনে বিএমএ’র মানববন্ধন থেকে হামলাকারিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আনার দাবি জানানো হয়। অন্যথায় সারাদেশে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারাী দেন চিকিৎসক নেতারা। হামলার প্রতিবাদে সারাদেশের চিকিৎসকরা কালো ব্যাজ ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন জেলা বিএমএ সভাপতি ডা. পঁ চ নু।
মানববন্ধনে বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহবুবুর রহমান, হাসপাতাল তত্বাবধায়ক ডা. বিধান পাল, নোবেল বড়ুয়া,  ইন্টার্ণ চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি হাসিবুল নাসিম সোহান ও সাধারণ সম্পাদক ছোটন চাকমা, নার্স অ্যাসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি দৌলতুন্নেছা, কর্মচারীদের পক্ষে মো. সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচএম মাহফুজুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মানববন্ধনে বিএমএ নেতারা বলেন, হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের উপর হামলার যাবতীয় তথ্য থাকার পরও অজ্ঞাত কারণে এখনো পর্যন্ত আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যা অত্যান্ত দু:খজনক।
তারা আরো বলেন, রোগিকে একজন চিকিৎসক নিজের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে চিকিৎসা দিতে গিয়ে রক্তাক্ত হবে তা মানা যায় না। আহত চিকিৎসককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আমরা এই ঘটনার দৃষ্টান্ত শাস্তি দাবী করছি। যতক্ষণ পর্যন্ত হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
উল্লেখ্য, আনোয়ার হোসেন নামে শহরের বাহারছরা এলাকার এক মৎস ব্যবসায়ী বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে পেট ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে আসেন। তার স্বজনদের দাবি তাকে একটি ইনজেকশন দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এটি পুশিং শেষ হতে না হতেই খিছুনি দিয়ে ঢলে পড়েন আনোয়ার। তিনি মারা গেছেন এটি জানতে পেরে তার স্বজনরা ইন্টার্ণ চিকিৎসক ও নার্সদের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ায়। যা পরবর্তীতে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে চিকিৎসা বন্ধ করে দেয় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। পরে তা আবার চালু হলেও শনিবার সকাল থেকে সব বিভাগ চালু থাকলেও পর্যাপ্ত সেবা বন্ধ রয়েছে বলে দাবি সেবা প্রার্থীদের।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM