শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন

নিরাপদে সেন্টমার্টিনের আটকা পড়া পর্যটক : নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

নিরাপদে সেন্টমার্টিনের আটকা পড়া পর্যটক : নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

অনলাইন বিজ্ঞাপন

ওয়াহিদ রুবেল, কক্সবাজার ৯ নভেম্বর ১৯ ইং

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৪ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে। সাগর উত্তাল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি পূর্ণিমা থিতির জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে সাগরের জোয়ারের পানি বেড়েছে ৭-৮ ফুট। জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালীর ঘলঘাটা, মাতারবাড়ি এলাকায় জোয়ারের পানি লোকালয় প্লাবিত করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে কক্সবাজারের সর্বত্র গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। সেন্টমার্টিনে আটকা পড়া পর্যটকরা নিরাপদে রয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে হোটেলেই বন্দি সময় পার করছেন বেড়াতে আসা পর্যটকরা। গৃহবন্দি হয়ে আছেন নিম্নাঞ্চলের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান জানান, বিকেল চারটা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় বুলবুল কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের এক টানা গতিবেগ রয়েছে ১২০ কিলোমিটার। যেটি দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ায় সম্ভবনা রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাত অব্যহত রয়েছে। ভারী বর্ষণের সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে।

এদিকে কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল এলাকায় বাসবাসকারিদের নিরাপদে সরে যেতে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করেছেন জেলা প্রশাসন। সেন্টমার্টিনে আটকা পড়া পর্যটকদের কাছ থেকে থাকা ও খাবারের উপর ৫০ ভাগ টাকা কম নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে সেন্টমার্টিনে গিয়ে আটকা পড়া পর্যটক নিরাপদে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে যে কোনো দুর্যোগকালীন মুহূর্তে স্থানীয়দের পাশাপাশি আটকেপড়া পর্যটকদের নিরাপদ রাখতে সাইক্লোন শেল্টার এবং বহুতল ভবনগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় পর্যটকদের আহার ও আবাসন নির্বিঘœ করা হচ্ছে। পর্যটকদের কাছ থেকে অর্ধেক টাকা নেয়ার জন্যও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান। জোয়ারের সময় দ্বীপেও বৃষ্টির পাশাপাশি হালকা বাতাস রয়েছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে বুলবুলের তীব্রতা শুরু হলে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ভূমিধস ও ঝুপড়ি ঘরগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা। পাহাড় ধসের শঙ্কা রয়েছে জেলা শহরসহ পাহাড়ি অন্যান্য এলাকাতেও। তাই বুলবুলের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি রোধে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় গতকাল এসব কথা জানান জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।

তিনি বলেন, জেলার ৮ উপজেলায় ৫৩৮টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বহুতল ভবনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোও। উপকূল হিসেবে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সদরের পোকখালী, চৌফলদন্ডী, খরুশকুল, টেকনাফের সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। সামগ্রিক ভাবে জেলার উপকূল এবং আশপাশ এলাকার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা এবং ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সহযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নেয়া রয়েছে। ০১৭১৫-৫৬০৬৮৮ নম্বর সচল রেখে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। দুর্যোগ সংক্রান্ত সকল তথ্য এখানে সরবরাহ ও পাওয়া যাবে।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক আনোয়ার হোসেন জানান, কক্সবাজারে সংকেত কম হলেও বৈরী আবহাওয়া এবং বৃষ্টির কারণে টিমের নারী ও শিশু-কিশোররা বের হতে ভয় পাচ্ছে। তাই কোথাও ঘুরা হচ্ছে না। তাই হোটেলেই বন্দি রয়েছি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোছাইন বলেন, দুর্যোগের সময় যাতে আইন-শৃঙ্খলার কোনো অবনতি না ঘটে সেদিকে বিশেষ নজর রেখে মাঠে রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। দৃষ্টি রাখা হচ্ছে পর্যটন এলাকাতেও।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Desing & Developed BY MONTAKIM